মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০১০

পাকিস্তান আমলের দুই সংগ্রামঃ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম

যেহেতু, তত্ত্বগত বিচারে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল মূলতঃ প্রগতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত। পাকিস্তান (১৯৪৭) ছিল একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র । পাকিস্তান ছিল রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র, যাকিনা ছিল মূলতঃ বুর্জোয়া একনায়কত্বও। পাকিস্তানের (১৯৪৭-১৯৭৪১) সমাজের উৎপাদন পদ্ধতি ছিল পুঁজিবাদী। পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী ছিল বুর্জোয়াশ্রেণী এবং সরকার ছিল বুর্জোয়া সরকার। পাকিস্তানের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ছিল প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত।

সেহেতু, পাকিস্তানের সমাজের বিপ্লবের স্তর ছিল সমাজতান্ত্রিক। অপর কথায় পাকিস্তানের সমাজের বিপ্লবের শ্রেণীচরিত্র ছিল সমাজতান্ত্রিক। পাকিস্তানের সকল প্রদেশের শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের এবং পূর্ববাঙলার শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের প্রধান সংগ্রাম ছিল পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পকিস্তানের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রাম।

যেহেতু, পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) পাকিস্তানের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের জনসাধারণের উপর ছিল তীব্র জাতিগত নিপীড়ন। পূর্ববাঙলার বাঙালী জাতির জনসাধারণ ও অন্যান্য জাতির জনসাধারণের উপর ছিল পাকিস্তানের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের তীব্র জাতিগত নিপীড়ন।

সেহেতু, পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের জাতিসম হের জনসাধারণের তাৎপর্যপূর্ণ সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানের ভেতরে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বিশেষতঃ স্বাধীনতার অধিকার বা বিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পূর্ববাঙলার বাঙালী জাতির জনসাধারণের তাৎপর্যপূর্ণ সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানের ভেতরে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বিশেষ করে স্বাধীনতার অধিকার বা বিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

আসলে পাকিস্তান আমলে পূর্ববাঙলার বাঙালী জাতির জনসাধারণের ছিল পাশাপাশি দুই সংগ্রাম। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। অপর কথায় পূর্ববাঙলায় এই দুই সংগ্রাম ছিল সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম। তবে গণতন্ত্রের সংগ্রাম ছিল সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অধীন।

যেহেতু, পাকিস্তানের মূল কেন্দ্রে কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল অত্যন্ত দুর্বল এবং পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ছিল অবিশ্বাস্যরকম ভৌগোলিক ব্যবধান। সেহেতু, পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যায়ে একাত্তর সালে পূর্ববাঙলার শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অবধারিতভাবে পরিনত হয় জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।

তারিখঃ ২০.০৬.২০১০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন