শনিবার, ২৬ জুন, ২০১০

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র বিরোধী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম

স্বাধীনতার পর বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০০৮) পুঁজিবাদী শোষণ বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম। কারণ বাঙলাদেশে উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর উপর মেহনতী মানুষের উপর পুঁজিবাদী প্রত্যক্ষ শোষণই প্রধান। বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী পরোক্ষ শোষণ বিরোধী সংগ্রাম শ্রমিকশ্রেণীর পুঁজিবাদী প্রত্যক্ষ শোষণ বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অংশ ও অধীন।

বাঙলাদেশের সামরিক বেসামরিক বুর্জোয়া স্বৈরতন (শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার বিশেষতঃ সরকার) বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম। বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর আভ্যন রীণ শ্রেণীসংগ্রামই প্রধান। কারণ বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর উপর মেহনতী মানুষের উপর শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিশেষতঃ বুর্জোয়া সরকারের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক শোষণ প্রধান। সরকার হলো প্রধান পীড়ণযন ও কর্তৃত্বের সংস্থা।

তাই সঙ্গত কারণে বাঙলাদেশে এসময়ে কমিউনিস্টদের মূল রাজনৈতিক সংগ্রাম প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা বস্তুতঃ ধর্মনিরপেক্ষ। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ধর্ম থেকে বিযুক্ত। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া স্বৈরতন বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম মূলতঃ সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক। বাঙলাদেশে শ্রমিক শ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম মূলতঃ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক নয়। কারণ বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত।

বাঙলাদেশে এসে কমিউনিস্টদের মূল সংগ্রাম মূল রাজনৈতিক সংগ্রাম বিদ্যমান প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া সংবিধানের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সমাজতান্ত্রিক সংবিধান মূলতঃ শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী মানুষের সংগ্রামের মৌলিক কর্মসূচী ভিত্তিক। এই কারণে কমিউনিস্টদের একটি আশু সংগ্রাম আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম সমাজতান্ত্রিক গণসংবিধান পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংগ্রাম।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের আরও আশু সংগ্রাম আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম বুর্জোয়া সংসদ নির্বাচনের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক গণসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংগ্রাম। প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া নির্বাচন কমিশনের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক গণনির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। যা কিনা সমাজতান্ত্রিক গণনির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি পূর্বশর্ত।

এই কারণে কমিউনিস্টদের একটি আশু সংগ্রাম আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম। বাঙলাদেশে বিদ্যমান সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক গণঅর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী মানুষের শ্রেণীপ্রাধান্য ভিত্তিক বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির সংগ্রাম। শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী নর নারীর আন্দোলনকারী সংস্থাগুলি কর্তৃক সমাজতান্ত্রিক গণঅর্ন্তবর্তীকালীন সরকার (বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সূচনা করতে সক্ষম) প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের পক্ষে এখনি সুনির্দিষ্টভাবে একই সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক গণসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সমাজতান্ত্রিক গণসংবিধান পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার সংগ্রাম এবং সমাজতান্ত্রিক গণনির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং সমাজতান্ত্রিক গণঅর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করতে অস্বীকার করাটা সংস্কারবাদ। অপরদিকে উপরোক্ত সংগ্রামগুলি সমপর্কে বলার জন্য বলা এবং বিভিন্ন অজুহাতে এই সংগ্রামগুলি মূলতঃ সংগঠিত না করাটা নৈরাজ্যবাদ।

তারিখঃ ০৯.০৩.২০০৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন