সোমবার, ২৭ জুন, ২০১১

তেল-গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষার সংগ্রামকে শক্তিশালী করুন। আনু মুহাম্মদের বিরুদ্ধে সরকারের কুৎসার জবাব দিন।

বাঙলাদেশে তেল-গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষার সংগ্রাম মূলতঃ প্রগতিশীল ন্যায়সঙ্গত এই সংগ্রাম ব্যাপক জনগণের মেহনতী জনগণের জাতীয় সম্পদ রক্ষার সংগ্রাম জাতীয় সম্পদ রক্ষার চলমান সংগ্রামের মূল কথা জনগণের সম্পদকে জনগণের শ্রেণীস্বার্থে কাজে লাগাতে হবে এবং তাকে জনগণের জীবন যাত্রার মান বাড়াতে ব্যবহার করতে হবে

তত্ত্বগত বিচারে তেল-গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষার চলমান সংগ্রাম সাবজেকটিভলি প্রধানতঃ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কিন্তু অবজেকটিভলি এই সংগ্রাম প্রধানতঃ দেশীয় পুঁজিবাদ বিরোধী সরকার বিরোধী কারণ বর্তমানকাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কাল বাঙলাদেশ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্রে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম প্রধান নয়

সঙ্গত কারণে শুরু থেকে তেল-গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষার সংগ্রাম ক্ষমতাসীন সরকার (বিএনপি সরকার অথবা আওয়ামী লীগ সরকার) বিরোধী ফলে জাতীয় সম্পদ রক্ষার এই সংগ্রামের উপর সরকারী নির্যাতন বিশেষভাবে নেমে আসে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় তেল-গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষার জাতীয় কমিটির মিছিলে পুলিশের লাঠির আঘাতে এই সংগ্রামের প্রধান নেতা অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ গুরুতর আহত হন সম্প্রতি জাতীয় কমিটির এক মিছিলে পুলিশের লাঠির আঘাতে অন্যতম নেতা অধ্যাপিকা রাহনুমা আহমেদ আহন হন

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি তেল উত্তোলন কোম্পানী বাঙলাদেশের সরকারের মধ্যে অনুষ্ঠিত গভীর সমুদ্রে তেল উত্তোলনে কুপ খনন বিষয়ক একটি অসম দুর্ণীতিযুক্ত চুক্তির প্রতিবাদে আনু মুহাম্মদ জাতীয় কমিটি ঢাকায় জুলাই অর্ধ দিবস হরতাল আহ্বান করেন সঙ্গে সঙ্গে হরতাল আহ্বানকারীদের বিরুদ্ধে আনু মুহাম্মদের বিরুদ্ধে সরকারী মহল থেকে কুৎসা শুরু হয় বলার অপেক্ষা রাখেনা জুলাইয়ের হরতাল পালনের মধ্য দিয়েই এই কুৎসার উপযুক্ত জবাব দেয়া সম্ভব

বাঙলাদেশে জাতীয় সম্পদ রক্ষার চলমান সংগ্রাম প্রধানতঃ অর্থনৈতিক সংগ্রাম এই সংগ্রাম যদিও প্রধানতঃ সরকার বিরোধী সংগ্রাম তবে তা সরকারের অর্থনৈতিক শোষণ বিরোধী সংগ্রাম

সঙ্গত কারণে বাঙলাদেশে জাতীয় সম্পদ রক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংগ্রামের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দাবী হওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারী সংস্থাগুলিকেই তেল গ্যাস কয়লা উত্তোলন দেশে এগুলির যথাযথ ব্যবহারের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে

বাঙলাদেশে জাতীয় সম্পদ রক্ষার চলমান সংগ্রাম জয়লাভ করবেই তবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ শিক্ষা দেয় সঠিক অগ্রসর রাজনৈতিক সংগ্রাম ছাড়া একটি দেশের কোন অর্থনৈতিক সংগ্রাম জয়লাভ করতে পারেনা তাই বাঙলাদেশে চলমান সঠিক অগ্রসর রাজনৈতিক সংগ্রামের সঙ্গে তেল-গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষার সংগ্রাম যথোপযুক্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন সঙ্গত কারণে প্রথমোক্ত সংগ্রাম কর্ত্তৃক দ্বিতীয়োক্ত সংগ্রাম পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন

বাঙলাদেশে চলমান সঠিক অগ্রসর রাজনৈতিক সংগ্রাম দেশীয় পুঁজিবাদ উচ্ছে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ক্ষমতাসীন বুর্জোয়া সরকার (সকল বুর্জোয়া সরকারই) বিরোধী সংগ্রাম বাঙলাদেশের শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের প্রধান সংগ্রাম

তারিখঃ ২১.০৬.২০১১                                                                                       আইউব রেজা চৌধুরী

মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১১

কোন পথে বাঙলাদেশে নারী নির্যাতনের অবসান ঘটতে পারে

বাঙলাদেশে ধনী দরিদ্র সকল নারীই সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নির্যাতিত। বিশেষ করে দরিদ্র নারী শ্রমজীবী নারী অধিকতর নির্যাতিত। এরা হলেন রুমানা, হেনা এবং আরও লক্ষ লক্ষ অসহায় নারী। সময়ের দাবী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সমাজের অগ্রসর, আন্তরিক ও সাহসী নারী পুরুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। 


বাঙলাদেশ একটি পুঁজিবাদী দেশ। বাঙলাদেশের সমাজ পুঁজিবাদী সমাজ! বাঙলাদেশের সমাজে পুরুষরা বেশীরভাগ ধনসমপত্তির মালিক। যেখানে পুঁজিবাদী শোষণ থাকে ও মজুরী দাসত্ব থাকে, যেখানে ধনসম্পদে ও ক্ষমতায়নে পুরুষের প্রাধান্য থাকে সেখানে নারী নির্যাতন অনিবার্য। শুধু তাই নয় গণিকাবৃত্তিও অনিবার্য। 



বাঙলাদেশের সমাজে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সীমিত। অপরদিকে বাঙলাদেশের সমাজে পুরুষরা বিশেষ রকম অধিকারপ্রাপ্ত। যেখানে পুঁজিবাদ, পুঁজিপতি, বণিক, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ থাকে সেখানে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমতা প্রতিষ্ঠা হতে পারেনা। এমনকি আইনের ক্ষেত্রেও তা হতে পারেনা। নামে মাত্র আইনের সমতার মানে জীবনের ক্ষেত্রে সমতা নয়। বাস্তব খুব কঠিন।



বাঙলাদেশের সমাজে নারী নির্যাতনের অবসান বা নারী মুক্তির মূল পথ বৃহৎ ভূমি, শিল্প কারখানা ও আবাসনে ব্যক্তি মালিকানার উচ্ছেদ এবং এগুলির রাষ্ট্রীয়করণ। ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা বাণিজ্য ও খাদ্য ব্যবসা জাতীয়করণ। সমাজে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয়করণ। সারাদেশে কৃষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠা এবং যৌথ উৎপাদন প্রবর্তন।



বাঙলাদেশের সমাজে নারী নির্যাতনের অবসান বা নারী মুক্তির মূল পথ সকল নারী ও পুরুষকে চাকুরী প্রদান এবং অফিসার ও শ্রমিকের বেতন ক্রমশঃ সমান সমান করা। শিল্প ও কৃষিতে ব্যাপক নারী ও পুরুষকে যৌথ উৎপাদনে টেনে আনা। সারাদেশে সামাজিক ভোজনালয়, কিন্ডারগার্টেন ও শিশুলালনাগার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারীকে তার সাধারণ সাংসারিক বৃত্ত থেকে বাহিরে টেনে আনা।



পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ভিত্তি শোষণমূলক ব্যক্তিগত মালিকানা। পুরুষতন্ত্র পুঁজিবাদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পুরুষতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে সমাজে ধনসম্পদে ও ক্ষমতায়নে পুরুষের প্রাধান্য, দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে।



সঙ্গত কারণে বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রাম ছাড়া বাঙলাদেশে নারী নির্যাতনের অবসান ঘটতে পারেনা। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ, পুরুষতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ উচ্ছেদ ছাড়া নারী নির্যাতনের অবসান বা নারী মুক্তি সম্ভব নয়।



এক কথায় বাঙলাদেশে নারী নির্যাতনের অবসান ও নারী মুক্তির মূল পথ পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করা। সমাজতন্ত্রই নারী মুক্তির মূল পথ।





১১.০৬.২০১১                                    আইউব রেজা চৌধুরী