তত্ত্বগত বিচারে সংস্কৃতি মানুষের পরিশ্রম ও মেধার নিরন্তর সৃষ্টি। সংস্কৃতি মানুষের সৃজনশীল ও আলোকোজ্জ্বল সৃষ্টি। সংস্কৃতি মূলতঃ দুই রকম। যেমন বস্তুমূলক ও মননমূলক। সংস্কৃতি নির্দিষ্ট উৎপাদন সম্পর্কের সাথে অবিচেছদ্য। যেমন সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ও সামন্ত সংস্কৃতি এবং পুজিঁবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা ও বুর্জোয়া সংস্কৃতি। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সংস্কৃতি নির্দিষ্ট শ্রেণীচরিত্র বিশিষ্ট। যেমন প্রগতিশীল সংস্কৃতি বা প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতি।
বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০০৮) উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা মুনাফা ভিত্তিক ও শোষণমূলক। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী এবং সরকার বুর্জোয়া সরকার। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী ও সরকারের সংস্কৃতি বুর্জোয়া সংস্কৃতি। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার সাম্প্রদায়িক চরিত্র বিশিষ্ট। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতিও সাম্প্রদায়িক চরিত্র বিশিষ্ট।
বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতি (বুর্জোয়া শিল্প, সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা) প্রধানতঃ বাঙলাদেশের শাসক বুর্জোয়া ও সরকারের স্বার্থরক্ষক। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংঙ্কৃতি শোষণমূলক ব্যক্তি মালিকানাকে মহিমমান্বিত করে এবং মুনাফা ভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসাবে উপস্থিত করে। শ্রেণীচরিত্রের কারণে বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতি সকল ধর্ম, জাতি, ভাষা ও বর্ণের সমান অধিকার এবং নারী পুরুষ সমানাধিকার বাস্তবে পরিণত করতে পারে না। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির মর্মকথা শোষণ, মুনাফা ও অসাম্য।
বাঙলাদেশে একইসঙ্গে বুর্জোয়া সংস্কৃতি, ধর্মীয় মৌলবাদী সংস্কৃতি (পশ্চাদপদ বুর্জোয়া সংস্কৃতি) ও সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি ক্রিয়াশীল। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া সংস্কৃতির আগ্রাসন শোষণ বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম সমাজতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতি বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অংশ ও অধীন। বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির মর্মকথা শোষণমুক্তি ও সাম্য এবং যৌথ মালিকানায় যৌথ জীবন।
বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির সহযোগী ধর্মীয় মৌলবাদী সংস্কৃতি ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বেশী মাত্রায়। বাঙলাদেশে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতি বিশেষভাবে নারী সমাজ ও মেহনতী মানুষের স্বার্থবিরোধী এবং জাতিসত্ত্বার স্বার্থবিরোধী। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির সহযোগী সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি মেহনতী মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিরোধী বিশেষভাবে।
বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল দিকগুলি প্রথমতঃ বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। দ্বিতীয়তঃ বাঙলাদেশে সকল জাতি, ভাষা ও বর্ণের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সমাজের সকল ক্ষেত্রে যথাঃ সমাজতান্ত্রিক গণসংসদ, গণসংবিধান পরিষদ, অফিস-আদালত, কৃষি কমিউন (গরীব কৃষকের কমিটি বা সমবায়) শিল্প কমিউন (শ্রমিকদের কারখানা কমিটি বা সমবায়) ও গণরন্ধনশালা বা রন্ধনশালা কমিউন এ নারী পুরুষের সমান অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। সমাজের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনা।
বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি ক্রমশঃ বাস্তবায়িত করা সম্ভব। বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে ভূমি, শিল্প, ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করা সম্ভব। সমাজতান িক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে ক্রমশঃ বাঙলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রবাবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান করা, সকল জাতি, ভাষা ও বর্ণের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এবং সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা এবং কৃষি কমিউন, শিল্প কমিউন, গণভোজনালয়, গণরন্ধনশালা এবং গণশিশুলালনাগার গড়ে তোলা সম্ভব।
তারিখঃ ১৯.০৩.২০০৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন