শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১১

লিবিয়ার কমিউনিস্টদের করণীয় (এক)


তত্ত্বগত বিচারে লিবিয়ার কমিউনিস্টদের করণীয় প্রধানতঃ বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র (ক্ষমতাসীন গাদ্দাফী সরকার) বিরোধী সশস্ত্র গণসংগ্রাম গড়ে তোলা। গাদ্দাফী সরকারই লিবিয়ার শ্রমিকশ্রেণীর, শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের মুক্তিসংগ্রামের পথে প্রধান সমস্যা প্রধান ত্রু

লিবিয়ার রাজতন্ত্রী স্বৈরতন্ত্র উচেছদের সংগ্রামে কর্ণেল গাদ্দাফীর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ভূমিকা ছিল প্রগতিশীল। রাজতন্ত্র উচেছদ উত্তর লিবিয়ায় বুর্জোয়া সমাজ বিনির্মাণে গাদ্দাফী একজন বুর্জোয়া স্বৈরশাসক। শ্রেণীচরিত্রের কারণে গাদ্দাফী শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদের একজন চতুর সহযোগী।

লিবিয়ায় চলমান সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থানের শ্রেণীচরিত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক (বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক) কিন্তু উপরোক্ত সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থানের শ্রেণীচরিত্র বস্তুতঃ সমাজতান্ত্রিক (সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক) লিবিয়ায় চলমান সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থান প্রধানতঃ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র সরকারের শোষণ নির্যাতন বিরোধী সশস্ত্র গণসংগ্রাম। লিবিয়ার কমিউনিস্টদের ভ্রান্ত তত্ত্বগত লাইনের কারণে দেশে সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম প্রাধান্যমূলক নয়।

লেনিন উত্তর ন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন (রাশিয়া চীন) র্তৃক সৃষ্ট মেহনতী জনগণের প্রধান শত্রু নির্ধারণ বিষয়ক ভ্রান্ত তত্ত্বগত লাইনের কারণে আরব দেশগুলিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুণগত বিকাশ ঘটেনি। এসকল দেশে মেহনতী জনগণের মুক্তিসংগ্রাম গুণগতভাবে শক্তিশালী হয়নি। এসব কথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

লেনিন উত্তর রাশিয়া চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভ্রান্ত তত্ত্বগত লাইনটি হলো সাম্রাজ্যবাদের পরোক্ষ শোষণকে প্রত্যক্ষ শোষণ হিসাবে নির্ধারণ করা। আরব দেশগুলির বুর্জোয়া শাসকগণকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের নেতা অথবা সাম্রাজ্যবাদের চাকর বাকর হিসাবে নির্ধারণ করা। অথচ আরবের উপরোক্ত বুর্জোয়া স্বৈরশাসকগণই হলো নিজ নিজ দেশে মেহনতী জনগণের প্রধান ত্রু আরবের রাজতন্ত্রী স্বৈরশাসকগণের ক্ষেত্রেও মূলতঃ একথা প্রযোজ্য।

লিবিয়ার কমিউনিস্টদের করণীয় হলো প্রধানতঃ ক্ষমতাসীন বুর্জোয়া স্বৈরশাসক গাদ্দাফী বিরোধী শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের সশস্ত্র গণসংগ্রাম সংগঠিত করা। পাশাপাশি লিবিয়ার নির্যাতিত জনগণকে সাহায্যের নামে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির শ্রেণীস্বার্থের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা। দেশে র্মীয় মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রাম গড়ে তোলা। দেশে সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম প্রধানতঃ সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম গড়ে তোলা।

লিবিয়ার কমিউনিস্টদের কর্তব্যকর্ম হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের পতাকাকে সমুন্নত রাখা। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান তত্ত্বগত ভিত্তি। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিশ্বজনীন কমিউনিস্ট মতবাদ কমিউনিস্ট ভাববাদ। আরব সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয় অনিবার্য। আরব শ্রমিকশ্রেণীর, শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের বিজয় অনিবার্য।

তারিখঃ ০৯.০৩.২০১১
আইউব রেজা চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১১

সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামঃ একুশের চেতনা বাস্তবায়নের পথ

পাকিস্তা রাষ্ট্রের (১৯৪৭) ভেতর বায়ান্ন সালে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাঙলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মূলতঃ প্রগতিশীল ন্যায়সঙ্গত। শ্রেণীচরিত্রের দিক থেকে বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম মূলতঃ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক।

একুশে ফেব্রুয়ারীর বাঙলা ভাষা সংগ্রাম সংঘটিত হয় মূলতঃ পূর্ববাঙলার বাঙালী বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বে। ফেব্রুয়ারীর বাঙলা ভাষা সংগ্রামে সাধারণভাবে সংগঠিত পূর্ববাঙলার কমিউনিস্টদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

সাধারণভাবে একুশের চেতনা বলতে বোঝায় বাঙলা ভাষাসহ পাকিস্তানের, পূর্ববাঙলার সকল ভাষার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা। বাঙালী জাতিসহ পাকিস্তানের, পূর্ববাঙলার নিপীড়িত জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠা। সমাজ জীবনে সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার যথাযথ প্রচলন। দেশে ধর্মনিরপেক্ষ অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক শিক্ষা, সমাজ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।

তত্ত্বগত বিচারে শ্রেণীচরিত্রের কারণে বুর্জোয়াদের পক্ষে সকল ভাষার সকল জাতির সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বুর্জোয়ারা প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শিক্ষা, সমাজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা। বিশেষতঃ নিপীড়িত জাতির বুর্জোয়ারা ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও সমাজজীবনে সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার যথাযথ প্রচলন করতে পারেনা। এসকল বুর্জোয়ারা শ্রেণীস্বার্থে নিজেদের দেশে বিদেশী ভাষাকে অধিকতর গুরম্নত্ব প্রদান করে।

পাকিস্তানের শাসন আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) এবং স্বাধীনতা উত্তর বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০১১) সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম সংগঠিত না হওয়ার কারণে একুশের চেতনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনও দূর্বল। সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের মূল কথা বৃহৎ ভূমি, শিল্প কারখানা, ব্যাংক বীমা, বাবসা বাণিজ্য আবাসন জাতীয়করণ এবং কৃষিতে যৌথ উৎপাদন প্রবর্তন।

যেহেতু বাঙলাদেশ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র; বাঙলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। সেহেতু কেবল শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের পথে বাঙলাদেশের সকল ভাষার সকল জাতির সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কেবল উপরোক্ত পথে বাঙলাদেশে সকল জাতির মেহনতী নরনারীর সম্মিলন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, বাঙলাদেশে মাতৃভাষা বিদেশী ভাষার মধ্যে মাতৃভাষাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা এবং সমাজজীবনে সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার যথাযথ প্রচলন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা সম্ভব।

এক কথায় বাঙলাদেশে একুশের চেতনা বাস্তবায়নের পথ প্রধানতঃ পুঁজিবাদী শোষণ উচেছদ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। দেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্র সরকার উচেছদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ধর্মী মৌলবাদ উচেছদের সংগ্রাম।


তারিখঃ ২১.০২.২০১১