শনিবার, ২৬ জুন, ২০১০

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সমস্যা, শিল্প ও ভূমি জাতীয়করণ এবং সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম

বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার অধীনে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য মুনাফা। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা শোষণমূলক। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা বিরোধমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা সুসঙ্গতভাবে কার্যকরভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তি ব্যক্তি মালিকানা।

বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার দেশের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা রক্ষা করে ও পরিচালিত করে। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানতঃ শাসক বুর্জোয়াদের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষক। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থও রক্ষা করে।

বাঙলাদেশে কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার (বিনির্মান পর্যায়) অধীনে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য মানুষের সুসঙ্গত প্রয়োজন মেটানো। কেবলামত্র সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা বাঙলাদেশে সুসঙ্গতভাবে কার্যকরভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তি রাষ্ট্রীয় মালিকানা, যৌথ মালিকানা ও সমবায় মালিকানা এবং সামাজিক মালিকানা।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান পর্যায় হলো সমাজের উৎপাদনের উপকরণগুলি জাতীয়করণ করা। দেশে শিল্প ও ভূমি থেকে পুজিঁবাদী ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করা। বিশেষতঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদনের উপকরণগুলি উৎপাদন করা। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিল্প দ্রব্য ও কৃষি দ্রব্য উৎপাদন করা। সমাজের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনা।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে ভূমি ও শিল্প জাতীয়করণ করা, ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করা, বিশেষতঃ খাদ্য ব্যবসা জাতীয়করণ করা সম্ভব। শহরাঞ্চলে শিল্প কারখানায় কারখানা কমিটি গঠন করা সম্ভব এবং গ্রামের গরীব কৃষকের সমবায় সংগঠিত করা সম্ভব।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারই প্রধানতঃ শহর ও গ্রামের শ্রমিকশ্রেণী শহরের গরীব শ্রমজীবি মানুষ, গ্রামের গরীব কৃষকের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষা করতে পারে। কারণ বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষেই সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রকে চুর্ন বিচুর্ন করা সম্ভব। সমাজে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পরিবর্তে জনগনের স্বশাসনের ভিত্তি সূচনা করা সম্ভব।

তাই, বাঙলাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সমস্যার সঠিক সমাধানের লক্ষ্যে অগ্রসর কমিউনিস্টদের ঐতিহাসিক কর্তব্য হলো প্রধানতঃ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম গড়ে তোলা। দেশে ভূমি ও শিল্প জাতীয়করণ করা, ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করা পুঁজিবাদী ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করার সংগ্রাম গড়ে তোলা। শহরাঞ্চলে শিল্প কারখানায় কারখানা কমিটি গঠন করার সংগ্রাম এবং গ্রামের গরীব কৃষকের সমবায় গঠনের সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করা।

তারিখঃ ০৪.০৩.২০০৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন