রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রাম জয়লাভ করবেই

বাঙলাদেশে চলমান গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রাম জয়লাভ করবেই। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রাম ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত ও প্রগতিশীল। দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা গার্মেন্টস শ্রমিকদের এই সংগ্রাম আধুনিক, অগ্রণী, সাহসী ও তাৎপর্যপ র্ণ ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম। চলমান গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রাম শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণীর গুণগত বিপরীতে শ্রমিকশ্রেণীর শাসকশ্রেণী রূপে সংগঠিত হওয়ার বিকাশমান প্রক্রিয়া।

একথা মোটেও সত্য নয় গার্মেন্টস মালিকরা (পুঁজিপতিরা) নিজেদের কলকারখানায় কাজ করতে দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখেন। বরং একথা প্রমানিত সত্য গার্মেন্টস শ্রমিকরাই নিজেদের শ্রম (শ্রমশক্তি) দ্বারা গার্মেন্টস মালিকদের জন্য কোটি কোটি টাকার সম্পদ সৃষ্টি করেন এবং গার্মেন্টস মালিকদের বাঁচিয়ে রাখেন।

একথা পরিক্ষীত সত্য কেবল শ্রমই (শ্রমশক্তি) মূল্য সৃষ্টি করে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শ্রমই (শ্রমশক্তি) গার্মেন্টস মালিকদের হাতে কোটি কোটি টাকার সমপদ তুলে দেন। গার্মেন্টস মালিকদের মেশিনপত্র, কাঁচামাল ও কলকারখানার দালান কোঠা মূল্য সৃষ্টি করে না। এগুলি গার্মেন্টস মালিকদের জন্য কোটি কোটি টাকার সম্পদ সৃষ্টি করে না।

বাঙলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্থান দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে প্রথম স্থানটি প্রবাসী বাঙলাদেশীদের, যারা বিদেশে নিজেদের শ্রমশক্তি বিক্রয় করে অর্জিত কোটি কোটি টাকা বাঙলাদেশে পাঠান। এতসব ঘটনার পরও গার্মেন্টস শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করেন। গার্মেন্টস নারী শ্রমিকরা কলকারখানায়, রাস্তায় ও পাড়ায় নির্যাতিত হন।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের শ্রম (শ্রমশক্তি) শোষণ করে গার্মেন্টস মালিকদের পুঁজি বিশেষ মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বাঙলাদেশের গার্মেন্টস মালিকরা (পুঁজিপতিরা) ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিপতিরা পরসপরের বন্ধু ও সহযোগী। গার্মেন্টস মালিকরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের রক্ত ঘামের সৃষ্টি শ্রমের সৃষ্টি কোটি কোটি টাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ী ক্রয় করেন। বিদেশে বড় বড় শহরে পারিবারিক সাপ্তাহিক ভ্রমনের জন্য গার্মেন্টস মালিকরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন অনায়াসে। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকরা দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ (বিশেষতঃ ভরণ পোষন বংশরক্ষা ইত্যাদির ব্যয় ভিত্তিক) গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী প্রবর্তন করতে অস্বীকার করেন।

বাঙলাদেশে চলমান গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রামের মূল কর্মসূচী গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সঙ্গতিশীল ন্যূনতম মজুরী (আপাততঃ ১০ হাজার টাকা) প্রবর্তন। যার ফলে সঠিক অগ্রসর কর্মসূচীর ভিত্তিতে অবধারিতভাবে ক্রমশঃ আরও উচ্চতর সংগ্রামের অর্থাৎ মজুরী প্রথার উচেছদের সংগ্রামের কর্মসূচীর উদ্ভব ঘটবে। পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কর্মসূচীর বিকাশ ঘটবে।

বাঙলাদেশে অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য সঠিক অগ্রসর কর্মসূচীর ভিত্তিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রাম সংগঠিত করা। দেশে বিদ্যমান সঠিক অগ্রসর কমিউনিস্ট রাজনৈতিক তত্ত্বের দ্বারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রামকে ক্রমশঃ সুসংগঠিত করা। বাঙলাদেশে চলমান গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রাম জয়লাভ করবেই। ঐতিহাসিক কারণেই ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মুখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অগ্রসর সংগ্রাম কখনো মাথা নত করবেনা। করতে পারেনা।

তারিখঃ ০৬.০৮.২০১০