মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০১০

মে দিবসের চেতনা সমুন্নত রাখুন। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়া খুব জরুরী

মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন দিবস। মে দিবস ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করে এবং সমাজতান্ত্রের সংগ্রামকে দৃঢ়বদ্ধ করে। মে দিবসের বিপ্লবী চেতনা, বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম অবিচেছদ্য ব্যাপার।

একটি পুঁজিবাদী দেশে মে দিবস উদযাপনের চিত্র সেই দেশের ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের বিকাশের মাত্রাকে প্রকাশ করে। মে দিবস উদযাপনের চিত্র বিশেষ করে একটি দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিকাশের মাত্রাকে তুলে ধরে। একটি পুঁজিবাদী দেশ হিসাবে বাঙলাদেশের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।

বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষ (শ্রমিক ও কৃষক) প্রধানতঃ নিজেদের দেশের পুঁজিবাদ কতর্ৃক সবচেয়ে বেশী শোষিত নির্যাতিত। বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষ প্রধানতঃ নিজেদের দেশের শাসক বুর্জোয়া ও সরকার কর্তৃক বিশেষতঃ বুর্জোয়া সরকার কর্তৃক সবচেয়ে বেশী শোষিত নির্যাতিত। পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে মেহনতী মানুষের উপর সাম্রাজ্যবাদের শোষণ ও ধর্মীয় মৌলবাদের শোষণ।

তত্ত্বগত বিচারে, বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের শোষণের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম। বাঙলাদেশে সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম। বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী মেহনতী মানুষের সংগ্রামও গুরত্বপূর্ণ সংগ্রাম।

এক্ষেত্রে বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো প্রথম মেহনতী মানুষের আশু দাবীগুলি (কর্মসূচীগুলি) নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলা। এসব আশু দাবী হলো অবিলম্বে জরুরী আইন প্রত্যাহার এবং প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। খাদ্যদ্রব্য মূল্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদু্যৎ ও পানি সরবরাহ।

বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের অন্যান্য আশু দাবী (কর্মসূচী) হলো সারাদেশে নতুন শিল্প কারখানা গড়া এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। গার্মেন্টস শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক ও বস কল শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা ও সঙ্গতিশীল মজুরী প্রদান। ক্ষেতমজুরদের কাজের নিশ্চয়তা ও সঙ্গতিশীল মজুরী এবং কৃষি উৎপাদনে গরীব কৃষককে রাষ্ট্রীয় সুবিধা।

বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের আরও আশু দাবী (কর্মস চী) হলো সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সকল প্রকার অসম চুক্তি বাতিল এবং সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বাজেয়াপ্ত। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। দূর্ণীতিপরায়ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলা পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদদের বিচার। নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিসমুহের আত্দনিয়ন ন অধিকার। বাঙলাদেশে মেহনতী নর নারীর সমান অধিকার ভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক সংবিধান পরিষদ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সূচনা।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো একই সঙ্গে মেহনতী মানুষের ম ল দাবীগুলি (কর্মস চীগুলি) নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম সংগঠিত করা। কারণ মেহনতী মানুষের ম ল দাবীগুলির বাস বায়নের মধ্য দিয়ে আশু দাবীগুলির যথাযথ ও স্থায়ী বাস্তবায়ন সম্ভব। মেহনতী মানুষের মূল সমস্যাগুলির (দাবীগুলি) সমাধানের মধ্য দিয়ে ম ল সমস্যাগুলির (দাবীগুলি) যথাযথ ও স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষের মূল দাবীগুলি (কর্মস চীগুলি) হলো খাদ্য ব্যবসাসহ সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ এবং ভূমি, শিল্প, ব্যাংক ও বীমা জাতীয়করণ। শিল্প কারখানায় কারখানা কমিউন গড়া এবং কৃষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, যৌথ মালিকানা ও কৃষি কমিউন গড়া। সামাজে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনা। সমাজতন বিনির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনা।

পুঁজিবাদ হলো একটি শোষণম লক ব্যবস্থা। পুঁজিবাদের প্রধান লক্ষ্য শোষণের মাধ্যমে মুনাফা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে মেহনতী মানুষের (শ্রমিক ও কৃষক) মূল দাবীগুলি বাস বায়িত করা সম্ভব নয়। ফলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে মেহনতি মানুষের (নারী ও পুরুষ) আশু দাবীগুলি যথাযথ ও স্থায়ীভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।

সঙ্গত কারণে, বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচেছদের মধ্য দিয়ে মেহনতী মানুষের মূল দাবীগুলি (খাদ্য ব্যবসাসহ সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য, ভূমি, শিল্প, ব্যাংক ও বীমা জাতীয়করণ এবং সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনা) বাস্তবায়িত করা সম্ভব। ফলে মেহনতী মানুষের আশু দাবীগুলি যথাযথ ও স্থায়ীভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব।

আসলে বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের কেন্দ্রীয় কর্তব্য হলো পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙলাদেশের সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করা। অন্যথা নয়। আর ভুল পথ নয়।

কারণ বাঙলাদেশে কেবল একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারই মেহনতী মানুষের মূল দাবীগুলি বাস্তবায়িত করতে পারে। মেহনতী মানুষের আশু দাবীগুলি যথাযথ ও স্থায়ীভাবে বাস বায়িত করতে পারে। বাঙলাদেশে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম এবং ক্ষেতমজুর সংগ্রামের ভূমিকা অত্যন গুররুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। যা কিনা মে দিবসের একটি সৃজনশীল চেতনা।


তারিখঃ ০১.০৫.২০০৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন