মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০১০

পাকিস্তান আমলের দুই সংগ্রামঃ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম

যেহেতু, তত্ত্বগত বিচারে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল মূলতঃ প্রগতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত। পাকিস্তান (১৯৪৭) ছিল একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র । পাকিস্তান ছিল রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র, যাকিনা ছিল মূলতঃ বুর্জোয়া একনায়কত্বও। পাকিস্তানের (১৯৪৭-১৯৭৪১) সমাজের উৎপাদন পদ্ধতি ছিল পুঁজিবাদী। পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী ছিল বুর্জোয়াশ্রেণী এবং সরকার ছিল বুর্জোয়া সরকার। পাকিস্তানের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন ছিল প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত।

সেহেতু, পাকিস্তানের সমাজের বিপ্লবের স্তর ছিল সমাজতান্ত্রিক। অপর কথায় পাকিস্তানের সমাজের বিপ্লবের শ্রেণীচরিত্র ছিল সমাজতান্ত্রিক। পাকিস্তানের সকল প্রদেশের শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের এবং পূর্ববাঙলার শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের প্রধান সংগ্রাম ছিল পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পকিস্তানের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রাম।

যেহেতু, পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) পাকিস্তানের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের জনসাধারণের উপর ছিল তীব্র জাতিগত নিপীড়ন। পূর্ববাঙলার বাঙালী জাতির জনসাধারণ ও অন্যান্য জাতির জনসাধারণের উপর ছিল পাকিস্তানের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের তীব্র জাতিগত নিপীড়ন।

সেহেতু, পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের জাতিসম হের জনসাধারণের তাৎপর্যপূর্ণ সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানের ভেতরে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বিশেষতঃ স্বাধীনতার অধিকার বা বিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পূর্ববাঙলার বাঙালী জাতির জনসাধারণের তাৎপর্যপূর্ণ সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানের ভেতরে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বিশেষ করে স্বাধীনতার অধিকার বা বিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

আসলে পাকিস্তান আমলে পূর্ববাঙলার বাঙালী জাতির জনসাধারণের ছিল পাশাপাশি দুই সংগ্রাম। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। অপর কথায় পূর্ববাঙলায় এই দুই সংগ্রাম ছিল সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম। তবে গণতন্ত্রের সংগ্রাম ছিল সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অধীন।

যেহেতু, পাকিস্তানের মূল কেন্দ্রে কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল অত্যন্ত দুর্বল এবং পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ছিল অবিশ্বাস্যরকম ভৌগোলিক ব্যবধান। সেহেতু, পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যায়ে একাত্তর সালে পূর্ববাঙলার শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অবধারিতভাবে পরিনত হয় জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।

তারিখঃ ২০.০৬.২০১০

বুর্জোয়া বাজেটের গুণগত বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখা উপস্থিত করুন

সম্প্রতি বাঙলাদেশের ক্ষমতাসীন বুর্জোয়া সরকার (আওয়ামী লীগ-মহাজোট সরকার) এক বছরের বাজেট ঘোষণা করেছে। শ্রেণীচরিত্রের কারণে বুর্জোয়া শাসক বুর্জোয়া সরকার বুর্জোয়া বাজেট প্রণয়ন করে। বুর্জোয়া বাজেটের পুঁজিবাদী বাজেটের অর্থনৈতিক ভিত্তি ব্যক্তিমালিকানা। বর্তমান বাজেটের মূল কথা প্রধানতঃ শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণীর স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানতঃ বাঙলাদেশের পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা। একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থকে রক্ষা করা।

বাঙলাদেশের অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য শ্রমিকশ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গির (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি) ভিত্তিতে বর্তমান বাজেটের যথাযথ বিচারম লক সমালোচনা করা। বাঙলাদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতী নর নারীর স্বার্থরক্ষক বাজেটের সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখা উপস্থিত করা। যাকিনা শ্রেণীচরিত্রের কারণে বাঙলাদেশের শাসক বুর্জোয়াদের বাজেটের গুণগত বিপরীত। শ্রেণীচরিত্রের কারণে কমিউনিস্টরা পুঁজিবাদী দেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখা উপস্থিত করে। সমাজতান্ত্রিক বাজেটের অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রথমতঃ রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও যৌথ মালিকানা।

তত্ত্বগত বিচারে, বর্তমান বাজেটের সমালোচনার নামে এই বাজেটকে খানিকটা ঠিকঠাক করে নেয়া বা গণমুখী করে নেয়ার ধ্যান ধারনা হলো সংস্কারবাদী ধ্যান ধারনা। অপরদিকে এই বাজেটের গুণগত বিপরীত শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের স্বার্থরক্ষক বাজেটের সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখা উপস্থিত না করে সমালোচনার নামে ঢালাওভাবে এই বাজেটের সমালোচনা করার ধ্যান ধারনা হলো নৈরাজ্যবাদী ধ্যান ধারনা।

বাঙলাদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের স্বার্থরক্ষক বাজেটের সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখার প্রথম ও প্রধান কথা ভূমি ও শিল্পে ব্যক্তি মালিকানা উচেছদ করা। আমাদের মতে প্রধানতঃ ভূমি ও শিল্পকে জাতীয়করণ করার কর্মস চীর ভিত্তিতে এবং কৃষিতে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনের কর্মস চীর ভিত্তিতে পুঁজিবাদী দেশ ও বুর্জোয়া রাষ্ট্র বাঙলাদেশে শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের স্বার্থরক্ষক বাজেটের সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখা উপস্থিত করা সম্ভব।

অগ্রসর কমিউনিস্টরা, তরুণ কমিউনিস্টরা এগিয়ে আসুন। বুর্জোয়া বাজেটের পুঁজিবাদী বাজেটের গুণগত বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক বাজেটের রূপরেখা উপস্থিত করুন। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল ও বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে একটি সৃজনশীল তত্ত্বগত লাইনের সূচনা করুন।


তারিখঃ ১৯.০৬.২০১০

দেশীয় পুঁজিবাদই ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশের মেহনতী জনগণের প্রধান সমস্যা। মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ প্রধান সমস্যা নয় ।

তত্ত্বগত বিচারে, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতী জনগণের জীবনে প্রধান সমস্যা নয়। বরং দেশীয় পুঁজিবাদই এই তিনটি দেশের মেহনতী জনগণের জীবনের প্রধান সমস্যা।

ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা হলো পুঁজিবাদী। এই তিনটি দেশের ব্যাপক জনগণের উপর দেশীয় পুঁজিবাদী শোষণ প্রধান। দেশীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের শোষণ নির্যাতন প্রধান। এসকল দেশে মেহনতী জনগণের জীবনে ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের তুলনায় দেশীয় পুঁজিবাদ অনেকগুণ বেশী ক্ষতিকর। দেশীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার অনেকগুণ বেশী ক্ষতিকর।

ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীদের কোন রাষ্ট্র ও সরকার নেই। ধর্মীয় মৌলবাদ ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাসী। ধর্মীয় মৌলবাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। ধর্মীয় মৌলবাদ পুঁজিবাদী তবে সেটা পশ্চাদপদ পুঁজিবাদী বা পশ্চাদপদ বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়া।

সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদী, একচেটিয়া পুঁজিবাদী। ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদের শোষণ মূলতঃ পরোক্ষ ও মূলতঃ অর্থনৈতিক। এই তিনটি দেশে সাম্রাজ্যবাদের কোন রাষ্ট্র ও সরকার নেই। সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় পুঁজিবাদ পরস্পরের সহযোগী। এই তিনটি দেশে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজির পরিমাণ সীমিত। পরাধীন দেশে লগ্নি পুঁজির ক্ষমতা এবং পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগে স্বাধীন দেশে লগ্নি পুঁজির ক্ষমতা সমান হয়না। সমান হতে পারেনা।

ভারত, পাকিস্তান ও বাঙলাদেশে যতদিন পুঁজিবাদী শোষণ থাকবে ততদিন এসকল দেশে ধর্মীয় মৌলবাদ কমবেশী ক্রিয়াশীল থাকবে। পৃথিবীর আরও দশটা দেশের মতো এসকল দেশে ভূমি ও শিল্পে ব্যক্তিমালিকানার উচ্ছেদ ছাড়া ও পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ছাড়া ধর্মীয় মৌলবাদের উচ্ছেদ ঘটবে না। পৃথিবীর আরও দশটা দেশের মতো এসকল দেশে পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ছাড়া সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদ ঘটবে না।

তারিখঃ ২১.০৬.২০১০

বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর কোনটি? বুর্জোয়া গণতন্ত্র নাকি সমাজতন্ত্র?

বাঙলাদশে শ্রেণীবিভক্ত সমাজের বিপ্লবের স্তর কোনটি? বুর্জোয়া গণতন্ত্র নাকি সমাজতন্ত্র? অপর কথায় বাঙলাদশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজের গুণগত পরিবর্তনের স্তর কোনটি? বুর্জোয়া গণতন্ত্র নাকি সমাজতন্ত্র? বাঙলাদশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এটা হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যা।

আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে বাঙলাদেশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজের বিপ্লবের স্তর কোনটি? বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক নাকি সমাজতান্ত্রিক? অর্থাৎ শমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক বা জাতীয় গণতান্ত্রিক? নাকি শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক? বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এটা হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যা।

কমিউনিস্ট তত্বগত বিচারে একটি সামন্তবাদী রাষ্ট্রে সমাজের বিপ্লবের স্তর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক। অপরদিকে একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সমাজের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। সমাজ বিকাশের ধারায় সামন্ত সমাজ ব্যবস্থার মূলগত বিপরীত পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা বা বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থা। বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কমিউনিস্ট সমাজব্যবস্থা।

একটি সামন্তবাদী সমাজে বুর্জোয়াশ্রেণী দেশের শ্রমিক কৃষকের সাহায্য নিয়ে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রধানতঃ সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু শ্রেণীচরিত্রের কারণে একটি দেশের প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়াশ্রেণী (বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলি) কখনও সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারেনা। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।

কেবল শ্রমিকশ্রেণী (কমিউনিস্ট পার্টি) একটি সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যাপক কৃষককে নিয়ে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারে। কেবল শ্রমিকশেণী (কমিউনিস্ট পাার্টি) গরীব কৃষককে নিয়ে একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে পারে (ইতিমধ্যে বুর্জোয়াশ্রেণী কতৃক প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে পরিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করার মধ্য দিয়ে) প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে চীনে এবং দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে রাশিয়ায়।

এই অর্থে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব হলো, শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে (কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে) একটি সামন্তবাদী রাষ্ট্রে সামন্ত স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদ করে শ্রমিক কৃষকের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে দেশে কৃষি বিপ্লব সম্পন্ন করা, ভূমি জাতীয়করণ করা ও প্রকৃত কৃষকের মধ্যে জমি লীজ দেওয়া। দেশে বৃহৎ শিল্প কারখানা, ব্যাংক ও বীমা জাতীয়করণ করা।

জনগণনতান্ত্রিক বিপ্লব হলো, একটি সামন্ততান্ত্রিক দেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক গণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান ও সংসদ উচ্ছেদ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করা। সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা এবং দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্মসূচী (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক) বাস্তবায়িত করার জন্য মূলগত ভিত্তি গড়ে তোলা।

এইভাবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হলো একটি পুঁজিবাদী দেশে বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদ করে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করা। দেশে ইতিমধ্যে প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে পরিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করা। দেশে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ বিষয়ক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সমাজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বাস্তবায়িত করা তথা কামউনিস্ট সমাজের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা।

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হলো বুর্জোয়া রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান, সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করা। শোষণমূলক ও মুনাফাভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী রাষ্ট্রীয় মালিকানা, যৌথ মালিকানা সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র কমিউনিস্ট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। ব্যক্তিমালিকানা ভিত্তিক বুর্জোয়া স্বতন্ত্র জীবনযাপনের গুণগত বিপরীত যৌথ মালিকানা ভিত্তিক ও সামাজিক মালিকানা ভিত্তিক যৌথ জীবন যাপন ও সুষম কমিউন জীবন যাপন গড়ে তোলা।

বাংলাদেশের সামজে বিপ্লবের স্তর নির্ধারণের প্রশ্নে বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা প্রধানতঃ দুইভাগে বিভক্ত। বিভিন্ন কারণে কমিউনিস্টদের দুটি অংশের মধ্যে প্রথম অংশটি শারীরিকভাবে বড় এবং দ্বিতীয় অংশটি তত্ত্বের দিক থেকে যুক্তিসংগত ও অগ্রসর ও শক্তিশালী।

কমিউনিস্টদের প্রথম অংশটির মতে বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক। বাঙলাদেশের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এখনও প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত নয়। বাংলাদেশের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত হওয়ার পরই বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর হবে সমাজতান্ত্রিক।

কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় অংশটির মতে বাংলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। কারণ বাংলাদেশের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রধানতঃ সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রধানতঃ সম্পন্ন হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। পাকিস্তান আমলেও পূর্ববাঙলার সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ সম্পন্ন ছিল।

বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের প্রথম অংশটির মতে বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক। কারণ বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ অবিকশিত এবং বাঙলাদেশের পুজিঁ সাম্রাজ্যবাদী লগ্নী পুঁজির নিয়ন্ত্রিত, পরাধীন ও অঙ্গীভূত। বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ দালাল পুঁজিবাদ। বাংলাদেশের খনিজসম্পদ (তেল, গ্যাস ও কয়লা) সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানী কতৃক নিয়ন্ত্রিত। বাঙলাদেশে কৃষিতে সামন্ত অবশেষে ক্রিয়াশীল।

বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের প্রথম অংশটির মতে বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক কারণ। বাঙলাদেশের সমাজে বুর্জোয়া গণতন্ত্র মূলতঃ বিকশিত নয়। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী সাম্রাজ্যবাদের দালাল। বাঙলাদেশে অনেকটা সময় সামরিক শাসন জারী ছিল। বাংলাদেশে এখনও আধা-সামরিক শাসন জারী রয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলতঃ নিষিদ্ধ। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতন্ত্র মূলতঃ অনুপস্থিত। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতন্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত নয়।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় অংশটির মতে বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। কারণ বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ বিকশিত। পাকিস্তান আমলেও পূর্ববাঙলার পুঁজিবাদ বিকশিত ছিল। বাংলাদেশে সরকারী শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার পর ব্যক্তি মালিকানায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। বাঙলাদেশে উৎপাদন সম্পর্ক পুঁজিবাদী। পাকিস্তান আমলেও পূর্ববাঙলার উৎপাদন সম্পর্ক ছিল পুঁজিবাদী। বাংলাদেশের পুঁজিবাদ মূলতঃ স্বাধীন। বাংলাদেশের পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদ পরস্পর সম্পর্কিত ও সহযোগী। বর্তমানকালের সাম্রাজ্যবাদ পরোক্ষ। নিজস্ব সরকার (সেনাবাহিনী, ব্যাংক ও বিচারবিভাগ) ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ পরদেশের পুঁজিবাদ, পুঁজিবাদী অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় অংশটির মতে বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। কারণ বাঙলাদেশ রাজনৈতিকভাবে একটি স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী এবং সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়াশ্রেণী পরস্পরের সহযোগী ও বন্ধু। বাঙলাদেশের সমাজে বুর্জোয়া গণতন্ত্র মুলতঃ বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্র। একটি দেশে প্রয়োজনে বুর্জোয়া গণতন্ত্র উদারনৈতিক চরিত্র ধারণ করে এবং প্রয়োজনে বুর্জোয়া গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্র চরিত্র ধারন করে।

বাঙলাদেশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে বিকশিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো চিহ্নিত করা যায়। যেমন, বাঙলাদেশের জমিদার প্রথার উচ্ছেদ, ভূমি, শিল্প, ব্যাংক ও বীমায় ব্যাক্তি মালিকানার অধিকার প্রতিষ্ঠিত, দেশে সংবিধান, সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, নিম্ন আদালতের উপস্থিতি, সারাদেশে উচ্চ শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষতঃ নারী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার, সার্বজনীন ভোটাধিকার বিশেষতঃ নারীর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশে দৈনিক জাতীয় সংবাদপত্র ও পুস্তক প্রকাশনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত। বাঙলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বিকশিত।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় অংশটির মতে শ্রমিকশ্রেণীর (কমিউনিস্টদের) কর্তব্য হলো বাঙলাদেশে একইসঙ্গে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম (সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম) সংগঠিত করা। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ছাড়া সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম জয়যুক্ত হতে পারেনা। তবে বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হলো সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের (সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম) সঙ্গী, অংশ ও অধীন। সমাজের গুণগত বিকাশের ধারায় বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর (কমিউনিস্টদের) সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম প্রধান।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় অংশটির মতে দেশে জরুরী আইন প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ডের অধিকারের দাবীতে শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম হলো মূলতঃ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। আর বাঙলাদেশের আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হলো সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম। গুণগত বিকাশের ধারায় বাঙলাদেশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে বুর্জোয়া গণতাান্ত্রিক সংগ্রাম হলো সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের (সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম) অধীন।

কমিউনিস্ট তত্ত্বগত বিচারে, একটি দেশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজের বিপ্লবের স্তর নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্র নির্ধারণের দিকটি। একটি দেশের রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্রের গুণগত বিপরীত হলো সমাজের বিপ্লবের শ্রেণীচরিত্র। তবে শ্রেণীবিভক্ত সমাজের বিপ্লবের কর্মসূচী প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থার মাত্রা এবং মেহনতী জনগণের সংগঠনের বিকাশের মাত্রা ও মেহনতী জনগণের চেতনার মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

যেহেতু বাস্তব ক্ষেত্রে ও কমিউনিস্ট তত্ত্বগত বিচারে, বাঙলাদেশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজরে বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। সেহতেু বাঙলাদেশের অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম সংগঠিত করা। তবে এক্ষেত্রে বাঙলাদেশের অগ্রসর কমিউনিস্টদের প্রথম প্রয়োজন সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বিশেষতঃ রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করা।

বাঙলাদেশের অগ্রসর কমিউনিস্টদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হলো দেশে শাসক বৃর্জোয়া ও সরকার বিরোধী সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের পাশাপাশি একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রাম সংগঠিত করা। তবে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম (বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম) এবং ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম (বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম) হলো দেশে চলমান সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের (সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম) অংশ ও অধীন।

কমিউনিস্ট তত্ত্বগত বিচারে বাঙলাদেশে এসময়ে সমাজতান্ত্রিক মূল রাজনীতি হলো বাঙলাদেশের আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। বাঙলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া সংবিধান ও বুর্জোয়া সংসদের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক সংবিধান ও সমাজতান্ত্রিক সংসদ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি।
বাঙলাদেশে এসময়ে আশু সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি হলো বুর্জোয়া জাতীয় সংসদের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক সংবিধান পরিষদ ও সমাজতান্ত্রিক সংসদ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। এইভাবে, বুর্জোয়া সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলাপরিষদ ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক সিটি কর্পোরেশন, সমাজতান্ত্রিক পৌরসভা, সমাজতান্ত্রিক উপজেলা পরিষদ ও সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়ন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার রাজনীতি।
সঙ্গত কারণে বাঙলাদেশে আগামীদিনের সমাজতান্ত্রিক সংবিধান, সমাজতান্ত্রিক সংসদ, সমাজতান্ত্রিক সিটি কর্পোরেশন, সমাজতান্ত্রিক পৌরসভা, সমাজতান্ত্রিক জেলা পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক উপজেলা ও সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়ন কাউন্সিলগুলি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ও সমাজতান্ত্রিক সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামো বিশিষ্ট।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো রাষ্ট্রীয় মালিকানা, যৌথ মালিকানা ও সামাজিক মালিকানা ভিত্তিক। সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গতিপূর্ণ ফলশ্রুতি শিল্প কমিউন ও কৃষি কমিউন এবং শোষণমুক্ত জনগনের স্বশাসন। সমাজতান্ত্রিক সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামো যৌথ মালিকানা ভিত্তিক। সমাজতান্ত্রিক সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামোর সঙ্গতিপূর্ণ ফলশ্রুতি শোষনমুক্ত জনগনের যৌথ জীবন যাপন।

এই কারণে বাঙলাদেশে এসময়ে তাৎপর্যপূর্ণ আশু সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি হলো বিদ্যমান বেসামরিক সামরিক বুর্জোয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুণগত বিপরীত সমাজতান্ত্রিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। শ্রমিক গরীব কৃষক মেহনতী মানুষের প্রাধান্যভিত্তিক বিপ্লবী গণঅভু্যত্থানের মাধ্যমে এবং শ্রমিক গরীব কৃষক মেহনতী মানুষের বিপ্লবী আন্দোলকারী সংস্থাগুলো দ্বারা গঠিত সমাজতান্ত্রিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি।

প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের সমাজে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, সাতচলি্লশের ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং বাঙলাদেশের একাত্তরের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি বাঙলাদেশের (১৯৪৭-২০০৮) সমাজে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সমাজের গুণগত পরিবর্তনের ধারায় বাঙলাদেশের শ্রমিকশ্রেণী ও গরীব কৃষক মেহনতী মানুষের মুক্তিসংগ্রামের শ্লোগান সমাজতন্ত্র। বাঙলাদেশের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় বিকাশমান বুর্জোয়া গণতন্ত্র হলো বিকাশমান সমাজতন্ত্রের সঙ্গী, অংশ ও অধীন।
২৯.০৬.২০০৮

মে দিবসের চেতনা সমুন্নত রাখুন। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়া খুব জরুরী

মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন দিবস। মে দিবস ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করে এবং সমাজতান্ত্রের সংগ্রামকে দৃঢ়বদ্ধ করে। মে দিবসের বিপ্লবী চেতনা, বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম অবিচেছদ্য ব্যাপার।

একটি পুঁজিবাদী দেশে মে দিবস উদযাপনের চিত্র সেই দেশের ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের বিকাশের মাত্রাকে প্রকাশ করে। মে দিবস উদযাপনের চিত্র বিশেষ করে একটি দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিকাশের মাত্রাকে তুলে ধরে। একটি পুঁজিবাদী দেশ হিসাবে বাঙলাদেশের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।

বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষ (শ্রমিক ও কৃষক) প্রধানতঃ নিজেদের দেশের পুঁজিবাদ কতর্ৃক সবচেয়ে বেশী শোষিত নির্যাতিত। বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষ প্রধানতঃ নিজেদের দেশের শাসক বুর্জোয়া ও সরকার কর্তৃক বিশেষতঃ বুর্জোয়া সরকার কর্তৃক সবচেয়ে বেশী শোষিত নির্যাতিত। পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে মেহনতী মানুষের উপর সাম্রাজ্যবাদের শোষণ ও ধর্মীয় মৌলবাদের শোষণ।

তত্ত্বগত বিচারে, বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের শোষণের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম। বাঙলাদেশে সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম। বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী মেহনতী মানুষের সংগ্রামও গুরত্বপূর্ণ সংগ্রাম।

এক্ষেত্রে বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো প্রথম মেহনতী মানুষের আশু দাবীগুলি (কর্মসূচীগুলি) নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলা। এসব আশু দাবী হলো অবিলম্বে জরুরী আইন প্রত্যাহার এবং প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। খাদ্যদ্রব্য মূল্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদু্যৎ ও পানি সরবরাহ।

বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের অন্যান্য আশু দাবী (কর্মসূচী) হলো সারাদেশে নতুন শিল্প কারখানা গড়া এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। গার্মেন্টস শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক ও বস কল শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা ও সঙ্গতিশীল মজুরী প্রদান। ক্ষেতমজুরদের কাজের নিশ্চয়তা ও সঙ্গতিশীল মজুরী এবং কৃষি উৎপাদনে গরীব কৃষককে রাষ্ট্রীয় সুবিধা।

বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের আরও আশু দাবী (কর্মস চী) হলো সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সকল প্রকার অসম চুক্তি বাতিল এবং সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বাজেয়াপ্ত। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। দূর্ণীতিপরায়ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলা পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদদের বিচার। নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিসমুহের আত্দনিয়ন ন অধিকার। বাঙলাদেশে মেহনতী নর নারীর সমান অধিকার ভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক সংবিধান পরিষদ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সূচনা।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো একই সঙ্গে মেহনতী মানুষের ম ল দাবীগুলি (কর্মস চীগুলি) নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম সংগঠিত করা। কারণ মেহনতী মানুষের ম ল দাবীগুলির বাস বায়নের মধ্য দিয়ে আশু দাবীগুলির যথাযথ ও স্থায়ী বাস্তবায়ন সম্ভব। মেহনতী মানুষের মূল সমস্যাগুলির (দাবীগুলি) সমাধানের মধ্য দিয়ে ম ল সমস্যাগুলির (দাবীগুলি) যথাযথ ও স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষের মূল দাবীগুলি (কর্মস চীগুলি) হলো খাদ্য ব্যবসাসহ সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ এবং ভূমি, শিল্প, ব্যাংক ও বীমা জাতীয়করণ। শিল্প কারখানায় কারখানা কমিউন গড়া এবং কৃষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা, যৌথ মালিকানা ও কৃষি কমিউন গড়া। সামাজে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনা। সমাজতন বিনির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনা।

পুঁজিবাদ হলো একটি শোষণম লক ব্যবস্থা। পুঁজিবাদের প্রধান লক্ষ্য শোষণের মাধ্যমে মুনাফা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে মেহনতী মানুষের (শ্রমিক ও কৃষক) মূল দাবীগুলি বাস বায়িত করা সম্ভব নয়। ফলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে মেহনতি মানুষের (নারী ও পুরুষ) আশু দাবীগুলি যথাযথ ও স্থায়ীভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।

সঙ্গত কারণে, বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচেছদের মধ্য দিয়ে মেহনতী মানুষের মূল দাবীগুলি (খাদ্য ব্যবসাসহ সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য, ভূমি, শিল্প, ব্যাংক ও বীমা জাতীয়করণ এবং সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনা) বাস্তবায়িত করা সম্ভব। ফলে মেহনতী মানুষের আশু দাবীগুলি যথাযথ ও স্থায়ীভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব।

আসলে বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের কেন্দ্রীয় কর্তব্য হলো পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙলাদেশের সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করা। অন্যথা নয়। আর ভুল পথ নয়।

কারণ বাঙলাদেশে কেবল একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারই মেহনতী মানুষের মূল দাবীগুলি বাস্তবায়িত করতে পারে। মেহনতী মানুষের আশু দাবীগুলি যথাযথ ও স্থায়ীভাবে বাস বায়িত করতে পারে। বাঙলাদেশে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম এবং ক্ষেতমজুর সংগ্রামের ভূমিকা অত্যন গুররুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। যা কিনা মে দিবসের একটি সৃজনশীল চেতনা।


তারিখঃ ০১.০৫.২০০৮

শনিবার, ২৬ জুন, ২০১০

একটি কমিউনিস্ট পার্টি একসময় একটি সংশোধনবাদী পার্টিতে পরিণত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ কোনটি ?

তত্ত্বগত বিচারে, একটি কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সংশোধনবাদ (ডান অথবা বাম) প্রাধান্য লাভ করলে সেই পার্টি আর কমিউনিস্ট পার্টি থাকে না। বাস বে সেই পার্টি মূলতঃ একটি বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়া পার্টিতে পরিণত হয়। বিপ্লব পূর্ব ও বিপ্লব উত্তর উভয়কালে একথা প্রযোজ্য।

কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টির ভাবাদর্শ বস্তুবাদী ভাবাদর্শ দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী ভাবাদর্শ। কমিউনিস্ট পার্টির ভাবাদর্শ মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ভাবাদর্শ। কমিউনিস্ট পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বন্দমূলক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। কমিউনিস্ট পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি মার্কসবাদী- লেলিনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।

অপরদিকে সংশোধনবাদী ভাবাদর্শ মূলতঃ ভাববাদী ভাবাদর্শ মূলতঃ বুর্জোয়া- পেটিবুর্জোয়া ভাবাদর্শ। সংশোধনবাদী দৃষ্টিভঙ্গী মূলতঃ বুর্জোয়া- পেটিবুর্জোয়া দৃষ্টিভঙ্গী। সংশোধনবাদ হলো মূলতঃ মার্কসবাদী-লেলিনবাদী মৌলিক নীতি অস্বীকার করা। সংশোধনবাদ মূলতঃ দুই রকম, ডান সংশোধনবাদ ও বাম সংশোধনবাদ। ডান সংশোধনবাদ মূলতঃ শ্রেণীসমন্বয়মূলক বুর্জোয়া লেজুরবৃত্তিমূলক এবং বাম সংশোধনবাদ মূলতঃ যান্ত্রিকতা গণবিচ্ছিন্নতা।

বিপ্লব পূর্ব অথবা বিপ্লব উত্তর একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টি এক সময় একটি সংশোধনবাদী পার্টিতে পরিণত হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ ক্রিয়াশীল থাকে। এক্ষেত্রে প্রধান কারণ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্মস্থকরণের অক্ষমতা। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মূল সূত্রগুলির সৃজনশীল অনুশীলন ও প্রয়োগের ব্যর্থতা।

বিপ্লব পূর্ব একটি দেশে প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্মস্থকরণ এবং এর সৃজনশীল অনুশীলন ও প্রয়োগের অক্ষমতার কারণে একটি কমিউনিস্ট পাটির পক্ষে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মূল্যায়ন সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বিষয়ক সংগ্রামের (প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম) সঠিক তত্ত্বগত লাইন ও ব্যবহারিক লাইন গড়ে তোলা সম্ভব হয় না।

একই কারণে (প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্মস্থকরণ এবং এর সৃজনশীল অনুশীলন ও প্রয়োগের অক্ষমতার কারণে) একটি কমিউনিস্ট পার্টি বিপ্লব পূর্ব একটি দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংগ্রাম (প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম) যথাযথ সংগঠিত করতে পারে না। ফলে কমিউনিস্ট পার্টিতে সংশোধবাদ ক্রমশঃ প্রবল হয়ে উঠে।

বিপ্লব উত্তর একটি দেশে প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্মস্থকরণ এবং এর সৃজনশীল অনুশীলন ও প্রয়োগের অক্ষমতার কারণে একটি কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে বিভিন্ন সময় দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। দেশে সমাজতন বিনির্মাণ বিষয়ক সঠিক তত্ত্বগত লাইন ও বাবহারিক লাইন গড়ে তোলা বিকশিত করা সম্ভব হয় না।

একই কারণে (প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্মস্থকরণ এবং এর সৃজনশীল অনুশীলন ও প্রয়োগের অক্ষমতার কারণে) বিপ্লব উত্তর একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতন বিনির্মাণ প্রক্রিয়া যথাযথ ক্রমাগত সংগঠিত করতে ব্যর্থ হয়। ফলে কমিউনিস্ট পার্টিতে সংশোধনবাদ ক্রমশঃ প্রবল হয়ে উঠে।

এসব ঘটনার বাস ব প্রমান পাওয়া যায় ইতালী ও পশ্চিম জার্মানীর কমিউনিস্ট পার্টির এক সময় সংশোধনবাদী পার্টিতে পরিণত হওয়ার দুঃখজনক ইতিহাসে। বিপ্লব উত্তর রাশিয়া ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একসময় সংশোধনবাদী পার্টিতে পরিণত হওয়ার বেদনাদায়ক ইতিহাসে। এসব কথা ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি ও ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

অথচ তত্ত্বগত বিচারে, বিপ্লব পূর্ব একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পর্টির কেন্দ্রীয় কর্তব্য হলো দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা (প্রথম সাধারণ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং এক পর্যায়ে সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে)। বিপ্লব উত্তর একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কর্তব্য হলো দেশে সমাজতন বিনির্মাণ করা (প্রলেতারীয় একনায়কত্ব জারী রাখার মাধ্যমে)।

এই কারণে বিপ্লব পূর্ব একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম একটি তাৎপর্যপূর্ণ কর্তব্য হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্মস্থ করা এবং এর সৃজনশীল প্রয়োগ ও অনুশীলন করা। প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মূল তত্ত্বগুলির ভিত্তিতে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মূল্যায়ন করা। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বিষয়ক মৌলিক আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক তত্ত্ব গড়ে তোলা।

একটি দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বিষয়ক মৌলিক আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল কথা হলো সমাজের উৎপাদন সমপর্কের শ্রেণীচরিত্র, রাষ্ট্রের শ্রেণীচরিত্র এবং শাসকশ্রেণীর শ্রেণীচরিত্র নির্ধারণ করা। দেশের মেহনতী মানুষের (শ্রমিক ও কৃষক) প্রধান শত্রু এবং প্রধান মিত্র নির্ধারণ করা। সমাজের বিপ্লবের স্তর বিপ্লবের শ্রেণীচরিত্র নির্ধারণ করা। প্রধান শত্রু বিরোধী মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম (মূল ও আশু) নির্ধারণ করা। চলমান বিপ্লবের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বিশেষতঃ রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণনয়ন করা।

বিপ্লব উত্তর একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম একটি তাৎপর্যপূর্ণ কর্তব্য হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ ক্রমাগত আত্দস্থ করা এবং এর সৃজনশীল অনুশীলন ও প্রয়োগ করা। প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ম ল্যায়ন করা। দেশে সমাজতন বিনির্মান বিষয়ক মৌলিক আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক তত্ত্ব গড়ে তোলা।

বিপ্লব উত্তর একটি দেশে সমাজতন বিনির্মাণ বিষয়ক মৌলিক আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল কথা হলো পুঁজিবাদ থেকে কমিউনিউজমে উত্তরনে প্রলেতারীয় একনায়কত্ব জারী রাখার মৌলিক তত্ত্ব। রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও যৌথ মালিকানাকে সামাজিক মালিকানায় রূপান্তর করা এবং কৃষি কমিউন ও কারখানা কমিউন প্রতিষ্ঠার মৌলিক তত্ত্ব।

ক্ষুদে উৎপাদনকে বৃহৎ আয়তন সামাজিক উৎপাদনে উত্তরণের মৌলিক তত্ত্ব, সমাজের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনার তত্ত্ব, এবং পণ্য সঞ্চালনকে দ্রব্য বিনিময় প্রথায় রূপান রের মৌলিক তত্ত্ব। সমাজে বিদ্যমান বুর্জোয়া অধিকার উচেছদ করা, শিল্প ও কৃষি, শহর ও গ্রাম এবং মানসিক শ্রম ও কায়িক শ্রমের মধ্যকার পার্থক্য দূর করার মৌলিক তত্ত্ব। রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসন পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সমাজের অর্থনীতি রাজনীতি ও সমাজিক সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার, সমান ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্রকে সমাজের নিয়ন্ত্রণাধীন করা এবং স্থায়ী আমলাতান্ত্রিক সেনাবাহিনীর স্থলে বিপ্লবী গণবাহিনী প্রতিষ্ঠা করা সমগ্র জনগণকে সশস করার মৌলিক তত্ত্ব। পরিপূর্ণ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা বা জনপরিচালনা কমিটি গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্র ক্রমশঃ শুকিয়ে মরার মৌলিক তত্ত্ব।

সংশোধনবাদের উৎস আধুনিক সমাজের বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়া শ্রেণীগত শিকড়। প্রতিক্রিয়াশীল পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা ও পুঁজিবাদী শ্রেণীর পরিমন্ডলে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের উদ্ভব হয়েছে। সমাজে বিদ্যমান সংশোধনবাদী ধারাগুলির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ মতাদর্শ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের অসামান্য উত্থান ঘটেছে বিকাশ ঘটেছে।

বিপ্লব পূর্ব একাধিক দেশে বিদ্যমান প্রতিক্রিয়াশীল পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিদ্যমান সংশোধনবাদী তত্ত্বগত ধারাগুলির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ মতাদর্শগত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে একটা সময় পর্যন্ত একটি কমিউনিস্ট পার্টি সাধারনভাবে একটি বিপ্লবী পার্টি হিসাবে ক্রিয়াশীল ছিল। যেমন জার্মানীর কমিউনিস্ট পার্টি ও ইতালীর কমিউনিস্ট পার্টি।

বিপ্লব উত্তর দেশগুলিতে বিদ্যমান প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষুদে উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে ও কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিদ্যমান সংশোধনবাদী তত্ত্বগত ধারাগুলির বিরুদ্ধে সুদৃঢ় মতাদর্শগত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে একটা সময় পর্যন্ত একটি কমিউনিস্ট পার্টি সাধারনভাবে একটি বিপ্লবী পার্টি হিসাবে ক্রিয়াশীল ছিল। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি এবং গণচীনের কমিউনিস্ট পার্টি।

তবে বিপ্লব পূর্ব একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিদ্যমান সংশোধনবাদী তত্ত্বগত ধারাগুলিকে পরাভূত করা সম্ভব প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল বিষয়ক সঠিক তত্ত্বগত লাইন ও ব্যবহারিক লাইন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংগ্রাম (প্রধানতঃ রাজনৈতিক সংগ্রাম) সঠিকভাবে ক্রমাগত সংগঠিত করার ভেতর দিয়ে।

বিপ্লব উত্তর একটি দেশে একটি কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিদ্যমান সংশোধনবাদী তত্ত্বগত ধারাগুলিকে পরাভূত করা সম্ভব প্রধানতঃ মার্কসবাদ-লেনিবাদের তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশে সমাজতন বিনির্মান বিষয়ক তত্ত্বগত লাইন ও বাবহারিক লাইন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। দেশে সমাজতন বিনির্মান প্রক্রিয়া সঠিকভাবে ক্রমাগত সংগঠিত করার ভেতর দিয়ে।

একটি দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুণগত বিকাশের ক্ষেত্রে তত্ত্বগত সঠিকতার বিষয়টি অসাধারণ তাৎপর্যপ র্ণ। বিকাশের নিয়মে, অনিবার্য কারণে একটি দেশে সঠিক তত্ত্বগত লাইনের নিকট ভ্রান্ত তত্ত্বগত লাইন পরাজিত হয়। সঠিক কমিউনিস্ট তত্ত্বগত লাইনের নিকট সংশোধনবাদী তত্ত্বগত ধারাগুলি পরাভূত হয়। আর, একটি কমিউনিস্ট আন্দোলনে তত্ত্বগত সঠিকতার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সবচেয়ে আলোকজ্জল ভান্ডার হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও বিদ্যমান বাস্তব পরিস্থিতি।

কারণ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান তত্ত্বগত ধারা নির্ধারক তত্ত্বগত ধারা। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিশ্বজনীন কমিউনিস্ট মতবাদ কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ। মার্কসবাদ হলো লেনিনবাদের ভিত্তি। বর্তমানকালের মার্কসবাদ হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যথাযথ আত্মস্থকরণ এবং এর সৃজনশীল প্রয়োগ অনুশীলনের সফলতার পদ্ধতি বা চাবিকাঠিও মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মুল তত্ত্বগুলির মধ্যেই নিহিত।


তারিখঃ ১৭.০৪.২০০৮

বাঙলাদেশে এসময় একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন

বাঙলাদেশে এসময় একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তোলা সত্যই খুব প্রয়োজন। কারণ স্বাধীনতা উত্তর বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের (শ্রমিক ও কৃষক) উপর বাঙলাদেশের পুঁজিবাদী শোষণ প্রধান। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী শোষণ উচেছদ এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম।

বাঙলাদেশে এসময় একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তোলা খুব জরুরী। কারণ বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের (নারী ও পুরুষ) উপর বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের শোষণ নির্যাতন বিশেষতঃ সরকারের শোষণ নির্যাতন প্রধান। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচেছদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মেহনতী মানুষের প্রধান সংগ্রাম প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম।

বাঙলাদেশে এসময় একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তোলা সঠিক ও বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ। কারণ তত্ত্বগত সমস্যার জন্য বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন এখনও বিভক্ত। বাঙলাদেশে এখনও একটি সঠিক ও ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠেনি। বাঙলাদেশে একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চা একটি সঠিক ও ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে একটি সঙ্গতিপূর্ণ শর্ত।

বাঙলাদেশে অগ্রসর তত্ত্বগত অবস্থানের (পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগ, রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র বাঙলাদেশ, বাঙলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী ও বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত) ভিত্তিতে গঠিত একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চার পক্ষে মেহনতী মানুষের সঠিক সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করা সম্ভব। বিশেষতঃ বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের সমাজতান্ত্রিক মূল ও আশু রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করা সম্ভব।
বাঙলাদেশে অগ্রসর কমিউনিস্ট পার্টি সংগঠনগুলি (বাঙলাদেশের সমাজ বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক, এরকম তত্ত্বগত অবস্থান ভিত্তিক) নিয়ে গঠিত একটি সঠিক সমাজতান্ত্রিক মোর্চা কর্তৃক বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম সংগঠিত করা সম্ভব। বিশেষতঃ বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের সমাজতান্ত্রিক মুল ও আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম সংগঠিত করা সম্ভব।

একটি সুসঙ্গত বিপ্লবী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে, আগামী দিনে একটি সঠিক ও ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ উচেছদ প্রধানতঃ পুঁজিবাদ উচেছদ এবং সমাজতন প্রতিষ্ঠিত হবে। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচেছদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এই তাৎপর্যপূর্ণ প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট পর্যায়ে একটি সমাজতান্ত্রিক মোর্চার সঠিক ও সুসঙ্গত ভূমিকা আসলেই খুব প্রয়োজন।

তারিখঃ ০৭.০৪.২০০৮

বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের প্রধান শত্রু কোনটি ? বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ ? নাকি বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ

বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যাটি এখন সুস্পষ্ট। তাহলো বাঙলাদেশের শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী মানুষের প্রধান শত্রু প্রধান সমস্যা কোনটি? বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ নাকি বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র (শাসক বুর্জোয়া ও সরকার) নাকি বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলি।

বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষের প্রধান শত্রু (বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ নাকি বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ) নির্ধারণ বিষয়ক তত্ত্বগত সমস্যাটির যথাযথ সমাধান না হওয়ার কারণে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত ও অসংগঠিত। বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন এখনও জাতীয় পর্যায়ে সংগঠিত ও শক্তিশালী নয়।

পাকিস্তান আমলে পূর্ববাঙলার জনগণের পাকিস্তানের জনগণেরও প্রধান শত্রু (পাকিস্তানের পুঁজিবাদ নাকি বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ) নির্ধারণ বিষয়ক তত্ত্বগত সমস্যাটির সঠিক সমাধান না হওয়ার কারণে পূর্ববাঙলার কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল বিভক্ত ও অসংগঠিত। পূর্ববাঙলার কমিউনিস্টরা একাত্তর সালে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে যথাযথ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন ।

ষাট দশকে সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ক বিভ্রান্তিমূলক আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট বিতর্ক পূর্ববাঙলার কমিউিনিস্ট আন্দোলনের গুরুতর ক্ষতিসাধন করে। বাঙলাদেশের কমিউিনিস্ট আন্দোলনের বিভক্তি ও দূর্বলতার পেছনে ষাট দশকের সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট বিতর্কের বিভ্রান্তিগুলির প্রভাব অনেকটা দায়ী। বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এগুলির জের এখনও ক্রিয়াশীল।

সময় খুব বড় শিক্ষক। একাত্তর সাল বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীরর মধ্য দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত লাইনটি বাস্তবে প্রমানিত হয়েছে। তা হলো পাকিস্তান আমলে পূর্ববাঙলার জনগণের প্রধান শত্রু ছিল পকিস্তানের পুজিবাদ, পাকিস্তানের শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার। পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদ, পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলি ছিল পূর্ববাঙলার জনগণের অন্যতম মূল শত্রু।

স্বাধীনতার পর সাতত্রিশ বছরে আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক একাধিক কারণে বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সরকারগুলির পতন ও পরিবর্তনের ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণর্ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত লাইনটি বাস্তবে প্রমানিত হয়েছে। তা হলো বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষের (শ্রমিক ও কৃষক) প্রধান শত্রু হলো বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ, বাঙলাদেশের শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার। পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদ পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি হলো বাঙলাদেশের মেহনতী মানুষের (নর নারী) অন্যতম মূল শত্রু।

বাঙলাদেশের অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ উচেছদ ও সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ক্রমশঃ সংগঠিত করা। বাঙলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচেছদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ক্রমশঃ সংগঠিত করা। বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিদ্যমান সংস্কারবাদী ধারা ও নৈরাজ্যবাদী ধারার পতন অনিবার্য এবং সুসঙ্গত বিপ্লবী কমিউনিস্ট ধারার বিজয় অনিবার্য।


তারিখঃ ০১.০৪.২০০৮

বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ উচেছদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম

বাঙলাদেশে সর্বত্র (শহর ও গ্রাম) মেহনতী মানুষের উপর প্রধান শোষণ পুঁজিবাদী। স্বাধীনতার পর বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের (শ্রমিক ও কৃষক) উপর পুঁজিবাদী শোষণ ক্রমশঃ তীব্রতর হয়েছে। বাঙলাদেশে মেহনতী মানুষের জীবনের গুরুতর সংকট এই সত্যকেই তুলে ধরে।

স্বাধীনতার পর বাঙলাদেশে সামগ্রিক অর্থে পুঁজিবাদ ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়েছে। নানারকম বাঁধা সমস্যার মধ্যেও বিকাশের নিয়মে বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ অনিবার্যভাবে বিকশিত হয়েছে। বাঙলাদেশের পুঁজিবাদী অর্থনীতির নেতা দেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী। শোষণ ও লুটতরাজের মধ্য দিয়ে এবং দুর্নীতি ও জালিয়াতির ভেতর দিয়ে বাঙলাদেশের শাসক বুর্জোয়ারা সমাজের বিপুল অধিকাংশ সমপদের মালিক।

আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদ ও বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ পরস্পরের অংশ। শ্রেণীস্বার্থের কারণে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদ ও বাঙলাদেশের পুঁজিবাদ পরসপরের সহযোগী এবং পরস্পরের উপর অংশতঃ নির্ভরশীল। বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজির উপস্থিতি রয়েছে। বাস্তবে বাঙলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজির ভূমিকা গৌণ। বর্তমান যুগে পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগে এসব কথা প্রমানিত সত্য।

বাঙলাদেশের পুঁজিবাদী অর্থনীতিই বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের অর্থনৈতিক ভিত্তি। বাঙলাদেশের পুজিবাদী অর্থনীতি মূলতঃ স্বাধীন এবং বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার মূলতঃ স্বাধীন। আসলে বাঙলাদেশের পুজিবাদ ও বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র (শাসক বুর্জোয়া এবং বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার) একটি অবিচিছন্ন প্রতিক্রিয়াশীল বাস্তবতা। পুজিঁবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা, শ্রমিকশ্রেণী, বুর্জোয়াশ্রেণী, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার দেশের মেহনতী মানুষের মুক্তিসংগ্রামের পথে প্রধান বাঁধা প্রধান সমস্যা।

বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী শোষণ বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রামের অংশ ও অধীন। বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণী কর্তৃক ধর্মীয় মৌলবাদ শোষণ নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রাম এবং আঞ্চলিক বুর্জোয়া আধিপত্যবাদী শোষণ নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রামের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।

বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ উচেছদ ও সমাজতন প্রতিষ্ঠার মূল সংগ্রাম ভূমি, শিল্প, ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করার সংগ্রাম। দেশে পুজিঁবাদী ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ করার সংগ্রাম। কৃষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও যৌথ মালিকানা এবং শিল্পে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সমাজের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনার সংগ্রাম। সমাজের সকল সদস্যের খাদ্য, বস , বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

বাঙলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল সংগ্রাম প্রধানতঃ বাঙলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচেছদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বাঙলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া সংবিধান বাতিল এবং সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের উচেছদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের নেতা একটি সঠিক সমাজতান্ত্রিক গণমোর্চা বিশেষতঃ একটি সঠিক ও ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি।

তারিখঃ ২৯.০৩.২০০৮

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির আগ্রাসন শোষণ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির সংগ্রাম

তত্ত্বগত বিচারে সংস্কৃতি মানুষের পরিশ্রম ও মেধার নিরন্তর সৃষ্টি। সংস্কৃতি মানুষের সৃজনশীল ও আলোকোজ্জ্বল সৃষ্টি। সংস্কৃতি মূলতঃ দুই রকম। যেমন বস্তুমূলক ও মননমূলক। সংস্কৃতি নির্দিষ্ট উৎপাদন সম্পর্কের সাথে অবিচেছদ্য। যেমন সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ও সামন্ত সংস্কৃতি এবং পুজিঁবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা ও বুর্জোয়া সংস্কৃতি। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সংস্কৃতি নির্দিষ্ট শ্রেণীচরিত্র বিশিষ্ট। যেমন প্রগতিশীল সংস্কৃতি বা প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতি।

বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০০৮) উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা মুনাফা ভিত্তিক ও শোষণমূলক। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী এবং সরকার বুর্জোয়া সরকার। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী ও সরকারের সংস্কৃতি বুর্জোয়া সংস্কৃতি। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার সাম্প্রদায়িক চরিত্র বিশিষ্ট। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতিও সাম্প্রদায়িক চরিত্র বিশিষ্ট।

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতি (বুর্জোয়া শিল্প, সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা) প্রধানতঃ বাঙলাদেশের শাসক বুর্জোয়া ও সরকারের স্বার্থরক্ষক। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংঙ্কৃতি শোষণমূলক ব্যক্তি মালিকানাকে মহিমমান্বিত করে এবং মুনাফা ভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসাবে উপস্থিত করে। শ্রেণীচরিত্রের কারণে বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতি সকল ধর্ম, জাতি, ভাষা ও বর্ণের সমান অধিকার এবং নারী পুরুষ সমানাধিকার বাস্তবে পরিণত করতে পারে না। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির মর্মকথা শোষণ, মুনাফা ও অসাম্য।

বাঙলাদেশে একইসঙ্গে বুর্জোয়া সংস্কৃতি, ধর্মীয় মৌলবাদী সংস্কৃতি (পশ্চাদপদ বুর্জোয়া সংস্কৃতি) ও সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি ক্রিয়াশীল। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া সংস্কৃতির আগ্রাসন শোষণ বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম সমাজতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতি বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অংশ ও অধীন। বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির মর্মকথা শোষণমুক্তি ও সাম্য এবং যৌথ মালিকানায় যৌথ জীবন।

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির সহযোগী ধর্মীয় মৌলবাদী সংস্কৃতি ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বেশী মাত্রায়। বাঙলাদেশে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কৃতি বিশেষভাবে নারী সমাজ ও মেহনতী মানুষের স্বার্থবিরোধী এবং জাতিসত্ত্বার স্বার্থবিরোধী। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির সহযোগী সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতি মেহনতী মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিরোধী বিশেষভাবে।

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংস্কৃতির বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল দিকগুলি প্রথমতঃ বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। দ্বিতীয়তঃ বাঙলাদেশে সকল জাতি, ভাষা ও বর্ণের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সমাজের সকল ক্ষেত্রে যথাঃ সমাজতান্ত্রিক গণসংসদ, গণসংবিধান পরিষদ, অফিস-আদালত, কৃষি কমিউন (গরীব কৃষকের কমিটি বা সমবায়) শিল্প কমিউন (শ্রমিকদের কারখানা কমিটি বা সমবায়) ও গণরন্ধনশালা বা রন্ধনশালা কমিউন এ নারী পুরুষের সমান অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। সমাজের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনা।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি ক্রমশঃ বাস্তবায়িত করা সম্ভব। বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে ভূমি, শিল্প, ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করা সম্ভব। সমাজতান িক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে ক্রমশঃ বাঙলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রবাবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান করা, সকল জাতি, ভাষা ও বর্ণের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এবং সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা এবং কৃষি কমিউন, শিল্প কমিউন, গণভোজনালয়, গণরন্ধনশালা এবং গণশিশুলালনাগার গড়ে তোলা সম্ভব।

তারিখঃ ১৯.০৩.২০০৮

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র বিরোধী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম

স্বাধীনতার পর বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০০৮) পুঁজিবাদী শোষণ বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম। কারণ বাঙলাদেশে উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর উপর মেহনতী মানুষের উপর পুঁজিবাদী প্রত্যক্ষ শোষণই প্রধান। বাঙলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী পরোক্ষ শোষণ বিরোধী সংগ্রাম শ্রমিকশ্রেণীর পুঁজিবাদী প্রত্যক্ষ শোষণ বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অংশ ও অধীন।

বাঙলাদেশের সামরিক বেসামরিক বুর্জোয়া স্বৈরতন (শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার বিশেষতঃ সরকার) বিরোধী সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম। বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর আভ্যন রীণ শ্রেণীসংগ্রামই প্রধান। কারণ বাঙলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীর উপর মেহনতী মানুষের উপর শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিশেষতঃ বুর্জোয়া সরকারের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক শোষণ প্রধান। সরকার হলো প্রধান পীড়ণযন ও কর্তৃত্বের সংস্থা।

তাই সঙ্গত কারণে বাঙলাদেশে এসময়ে কমিউনিস্টদের মূল রাজনৈতিক সংগ্রাম প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা বস্তুতঃ ধর্মনিরপেক্ষ। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ধর্ম থেকে বিযুক্ত। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া স্বৈরতন বিরোধী শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম মূলতঃ সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক। বাঙলাদেশে শ্রমিক শ্রেণীর প্রধান সংগ্রাম মূলতঃ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক নয়। কারণ বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত।

বাঙলাদেশে এসে কমিউনিস্টদের মূল সংগ্রাম মূল রাজনৈতিক সংগ্রাম বিদ্যমান প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া সংবিধানের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সমাজতান্ত্রিক সংবিধান মূলতঃ শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী মানুষের সংগ্রামের মৌলিক কর্মসূচী ভিত্তিক। এই কারণে কমিউনিস্টদের একটি আশু সংগ্রাম আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম সমাজতান্ত্রিক গণসংবিধান পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংগ্রাম।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের আরও আশু সংগ্রাম আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম বুর্জোয়া সংসদ নির্বাচনের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক গণসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংগ্রাম। প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া নির্বাচন কমিশনের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক গণনির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। যা কিনা সমাজতান্ত্রিক গণনির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি পূর্বশর্ত।

এই কারণে কমিউনিস্টদের একটি আশু সংগ্রাম আশু রাজনৈতিক সংগ্রাম। বাঙলাদেশে বিদ্যমান সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক গণঅর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী মানুষের শ্রেণীপ্রাধান্য ভিত্তিক বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির সংগ্রাম। শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী নর নারীর আন্দোলনকারী সংস্থাগুলি কর্তৃক সমাজতান্ত্রিক গণঅর্ন্তবর্তীকালীন সরকার (বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সূচনা করতে সক্ষম) প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

বাঙলাদেশের কমিউনিস্টদের পক্ষে এখনি সুনির্দিষ্টভাবে একই সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক গণসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সমাজতান্ত্রিক গণসংবিধান পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার সংগ্রাম এবং সমাজতান্ত্রিক গণনির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং সমাজতান্ত্রিক গণঅর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করতে অস্বীকার করাটা সংস্কারবাদ। অপরদিকে উপরোক্ত সংগ্রামগুলি সমপর্কে বলার জন্য বলা এবং বিভিন্ন অজুহাতে এই সংগ্রামগুলি মূলতঃ সংগঠিত না করাটা নৈরাজ্যবাদ।

তারিখঃ ০৯.০৩.২০০৮

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সমস্যা, শিল্প ও ভূমি জাতীয়করণ এবং সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম

বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার অধীনে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য মুনাফা। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা শোষণমূলক। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা বিরোধমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা সুসঙ্গতভাবে কার্যকরভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তি ব্যক্তি মালিকানা।

বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার দেশের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা রক্ষা করে ও পরিচালিত করে। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানতঃ শাসক বুর্জোয়াদের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষক। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থও রক্ষা করে।

বাঙলাদেশে কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার (বিনির্মান পর্যায়) অধীনে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য মানুষের সুসঙ্গত প্রয়োজন মেটানো। কেবলামত্র সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা বাঙলাদেশে সুসঙ্গতভাবে কার্যকরভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তি রাষ্ট্রীয় মালিকানা, যৌথ মালিকানা ও সমবায় মালিকানা এবং সামাজিক মালিকানা।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান পর্যায় হলো সমাজের উৎপাদনের উপকরণগুলি জাতীয়করণ করা। দেশে শিল্প ও ভূমি থেকে পুজিঁবাদী ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করা। বিশেষতঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদনের উপকরণগুলি উৎপাদন করা। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিল্প দ্রব্য ও কৃষি দ্রব্য উৎপাদন করা। সমাজের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীকে ব্যাপক যৌথ উৎপাদনে সামাজিক উৎপাদনে টেনে আনা।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে দ্রব্যমূল্য বিশেষতঃ খাদ্যদ্রব্য মূল্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কারণ বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে ভূমি ও শিল্প জাতীয়করণ করা, ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করা, বিশেষতঃ খাদ্য ব্যবসা জাতীয়করণ করা সম্ভব। শহরাঞ্চলে শিল্প কারখানায় কারখানা কমিটি গঠন করা সম্ভব এবং গ্রামের গরীব কৃষকের সমবায় সংগঠিত করা সম্ভব।

বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারই প্রধানতঃ শহর ও গ্রামের শ্রমিকশ্রেণী শহরের গরীব শ্রমজীবি মানুষ, গ্রামের গরীব কৃষকের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষা করতে পারে। কারণ বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষেই সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রকে চুর্ন বিচুর্ন করা সম্ভব। সমাজে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পরিবর্তে জনগনের স্বশাসনের ভিত্তি সূচনা করা সম্ভব।

তাই, বাঙলাদেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সমস্যার সঠিক সমাধানের লক্ষ্যে অগ্রসর কমিউনিস্টদের ঐতিহাসিক কর্তব্য হলো প্রধানতঃ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম গড়ে তোলা। দেশে ভূমি ও শিল্প জাতীয়করণ করা, ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ করা পুঁজিবাদী ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করার সংগ্রাম গড়ে তোলা। শহরাঞ্চলে শিল্প কারখানায় কারখানা কমিটি গঠন করার সংগ্রাম এবং গ্রামের গরীব কৃষকের সমবায় গঠনের সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করা।

তারিখঃ ০৪.০৩.২০০৮

বাঙলাদেশে বিকাশমান সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম

যেহেতু, তত্ত্বগত বিচারে একাত্তরের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ মূলতঃ প্রগতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত। বাঙলাদেশ (১৯৭১-২০০৮) রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র। বাঙলাদেশের সমাজের উৎপাদন পদ্ধতি পুঁজিবাদী। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী ও সরকার বুর্জোয়াশ্রেণী ও বুর্জোয়া সরকার। বাঙলাদেশের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত।

সেহেতু, বাঙলাদেশের আসন্ন সমাজ বিপ্লব সমাজতান্ত্রিক। বাঙলাদেশের সমাজ বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক। অপর কথায় বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের শ্রেণীচরিত্র সমাজতান্ত্রিক। বিকাশমান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব উত্তর বাঙলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক সরকার। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব উত্তর বাঙলাদেশের উৎপাদন পদ্ধতি সমাজতান্ত্রিক (বিনির্মাণ পর্যায়)। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব উত্তর বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী শ্রমিকশ্রেণী। যাকিনা বাঙলাদেশে বিদ্যমান বুর্জোয়া আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গতিপূর্ণ অনিবার্য বিপরীত গুণগত বিকাশের পর্যায়।

যেহেতু, বাঙলাদেশে বিদ্যমান গণতন প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া গণতন । বিদ্যমান এই গণতন প্রকৃত অর্থে বুর্জোয়া স্বৈরতন বা বুর্জোয়া একনায়কত্ব। সেহেতু, বিকাশমান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব উত্তর বাঙলাদেশের গণতন শ্রমিকশ্রেণীর গণতন বা সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র । যা কিনা প্রকৃত অর্থে সর্বহারার একনায়কত্ব বা শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব।

প্রথমতঃ ও প্রধানতঃ বাঙলাদেশে বিদ্যমান পুঁজিবাদ উচেছদের সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সমপন্ন হবে। অপর কথায় বিদ্যমান বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের উচ্ছেদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে বিকাশমান এই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব একইসঙ্গে পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ সামপ্রদায়িকতা (পাকিাস্তান-সৌদি চক্র ও আলকায়েদা-তালেবান চক্রসহ) এবং ভারতীয় আঞ্চলিক বুর্জোয়া আধিপত্যবাদ উচেছদ করবে।

বাঙলাদেশের আসন্ন সমাজ বিপ্লবের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতা সর্বহারাশ্রেণী বা শ্রমিকশ্রেণী (শিল্প শ্রমিক)। বিশেষতঃ শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী পার্টি বা একটি সঠিক, অগ্রসর ও ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি। বাঙলাদেশে বিকাশমান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে শ্রমিকশ্রেণীর প্রধান মিত্র বা প্রধান সহযোগী গ্রামাঞ্চলের গরীব কৃষক। বিপ্লব উত্তর বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে বা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব এবং গ্রামাঞ্চলের গরীব কৃষকের মধ্যকার সমঝোতা বা ঐক্য একটি মূল শর্ত।

তারিখঃ ২৬.০২.২০০৮

শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০১০

THEORETICAL LINE (PART 6)

Dear Friends,

(India, Pakistan, Srilanka, Bangladesh and Nepal)


To us present era is era of indirect imperialism. Present era is era of “national” ruling bourgeio autocracy.

To us present era is era of revolutionary reorganisation of communist movement and reawakening, resurrection of Communist movement.

Our aim is to establish united socialist world in 21st century. Our aim is to establish united socialist South Asia. Our aim is to establish socialist Bangladesh (East Bangal).

So at present our main task is to build up a united commmunist party of Bangladesh on basis of correct theoretical line. On basis of correct progrmes, correct political programe.

So our main task is to complete revolutionary reorganisation and reawakening, resurrection of communist movement in Bangladesh.

It is critical and long way. We shall try to overcome it. Thanks




Dated: 10.08.2008

THEORETICAL LINE (PART 5)

Dear Friends,

(India, Pakistan, Srilanka, Bangladesh and Nepal)


Only Socialism can bring democrcy and peace in India, Pakistan, Bangladesh, Srilanka and Nepal. Only Socialism can uproot capitalism, imperialism and religious fundamentalism. Here democracy means socialist democracy (proletariat democracy).

First and principal step towards socialism is to overthrow bourgeois state and government (bourgeois political autocracy) and to establish socialist state and government (dictatorship of proletariat) in India, Pakistan, Bangladesh, Srilanka and Nepal

First and principal way of building socialism is to abolish capitalist private ownership in land and industry in these South Asian countries.

Indirect imperialism is not principal political autocracy in politically independent bourgeois state India, Pakistan, Bangladesh, Srilanka and Nepal.

Finance capital is not principal amount of capitalism private ownership (major amount of capital) in land and industry in capitalist country India, Pakistan, Bangladesh, Srilanka and Nepal. Thanks.




Dated: 05.05.2009

THEORETICAL LINE (PART 4)

Dear Friends,

(India, Pakistan, Srilanka, Bangladesh and Nepal)

Marxism (Marx-Engls) of present era is Marxism-Leninism. Marxism is supreme development in ideology. Leninism is unparelleled contribution in Marxism. Histroy of world communist movement proves it in real.

Marxism is basis of Leninism. On other hand on basis of creative contribution in Marxism, Leninism became intergral part of Marxism. In fact only Marxism and Leninsism are insparable. Our era is of era of Marxism-Leninism. We live in era of Marx, Engels and Lenin.

We should study mainly Marxism-Leninism. We should learn mainly from Marx, Engels and Lenin. Total concept of communist revolution and socialism-communism are found in Marxism-Leninism. Basic outlines of communist revolution and building socialism-communism are explained in communist literature of Marx, Engels and Lenin.

We should also study Kautsky, Plekhanov, Trotsky, Rosa, Gramsi, Stalin, Mao and Hoxa, We should learn from their positive communist literature.

Marxism-Leninism are universal communist ideology (doctrine). Marx, Engels and Lenin are universal communist theoretician and organizer. Marx, Engels and Lenin are world communist authority.

It is true world communist movement is in serious crisis. Crisis of world connumist movement demands correct evaluation of post Lenin world connunist movement with critical criticism. Advanced and courageous young communist theoreticians and organizers should come forward to contribute in this regard accordingly. Thanks.



Dated: 05.05.2009

THEORETICAL LINE (PART 3)

Dear Friends,

(India, Pakistan, Srilanka, Bangladesh and Nepal)


Present era is era of indirect imperialism. Mot countries of world are capitalist. Most states of world are politically independent bourgeois state. Such as India, Pakistan, Bangladesh, Sir Lanka and Nepal.

Bourgeois government is main executive organ and main repressive machine of bourgeois state. Bourgeois governments are one against working people.

Fight mainly against capitalism in Bangladesh. Fight principally against bourgeois government and state in Bangladesh. Mainly in this way fight for socialism in Bangladesh. Only socialism can bring working people’s emancipation in Bangladesh.

Fight simultaneously against imperialism and religious fundamentalism in Bangladesh. Remember anti-imperialist movement and anti-religious fundamentalist movement are subordinate to anti-bourgeois government movement and state in Bangladesh.

Fight simultaneously for democracy and socialism in Bangladesh. Remember democratic movement is subordinate to socialist movement in Bangladesh. Thanks



Dated: 25.06.2009

THEORETICAL LINE (PART 2)

Dear Friends,

(India, Pakistan, Srilanka, Bangladesh and Nepal)

Theoretical struggle is precondition for qualitative development of communist movement in a country. Particularly communist theoretical superiority is must on given anti-capitalism, anti-imperialism and anti-Religious fundamentalism theoretical movement in an country.

Theoretical struggle is perquisite for unity of communist movement in a country. Particularly theoretical victory is must over given theoretical debate theoretical struggle within divided communist movement in a country.

Communist movement in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh exists and active for about one hundred years. Communist movement in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh is divided for about fifty years.

It is not possible for an advanced and correct but single Communist Party organization to organize qualitative development of communist movement in a country. It is also not possible to build up united communist Party (UCP) in a country by only single communist party organization in future.

For historical reason it is possible only for half-dozen advanced and correct communist party organizations to organize qualitative development of communist movement in a country. It is possible to build up united communist party (ucp) in a country in future.

But it is true during this period this process a most advanced and correct single Communist Party organization will play leading rule in a country.

In fact, after death of Lenin World Communist movement lost its theoretical depthness and standard gradually.

It is true without practice theory is paper of big thoughts and big words. It is also without theory practice is blind process and blind path.

Here, most significant truth is correct theory creates proper practice. Correct theory develops through correct theoretical practice and practical practice. Correctness owns significant characteristics and substance. In fact, correctness grows through correct method and creates correctness.


Communists who grasps gist of marxism-leninism justly and deeply they never can lose confidence on marxism-leninism and socialism-communism. These communists can never detach themselves from communist theoretical and practical movement.

Gist of marxism-leninism is historical meterialism-dilactical materialism and theory of surplus value.

It is true present world communist movement is passing through a dark age Particularly, present world communist movement lacks of theoretical quality and standard. Total picture of world communist movement reveals this truth. communist movement in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh proves this fact. Due to theoretical confusion and disorder communist movement in India, Pakistan and Bangladesh is divided and weak.

So now our main task is revolutionary reorganization of Communist movement and awakening, resurrection in Bangladesh. During this process communist theoretical struggle with appropriate practice is more important than general communist practical struggle in Bangladesh. Thanks.



Date: 05.02.2009

THEORETICAL LINE (PART 1)

Dear Friends,

(India, Pakistan, Srilanka, Bangladesh and Nepal)

In a class society political oppression is principal oppression. So in a class society political movement is principal movement.

Movement against government is political movement. Movement against property ownership is economical movement. Movement against communalism (muslim or hindu) is socio-cultural movement.

It is regrettable but true that most communists in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh try to organize mainly anti-imperialism movement or anti-communalism movement in their countries.

Most communists in India, Pakistan, Sirlanka and Bangladesh do not try mainly to organize movement against reactionary bourgeois government in their countries.

Theoretical confusion theoretical disorder theoretical backwardness in communist movement are responsible for it.

To us principal reason principle cause of want of qualitative development of communist movement in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh is absence of continuous movement against reactionary bourgeois government as principal movement principal political movement.

Government of India (Monmohan), Government of Pakistan (Zardari) and Government of Bangladesh (Fakhruddin) are more harmful for people in respective country than imperialism (Bush) and communalism (muslim or hindu).

Communists should mainly organize continuous movement political movement against reactionary bourgeois government in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh to establish socialist government in future in their countries. At same time communists should simultaneously organize continuous movement against imperialism and communalism in their countries.

Mainly on this way communists movement in India, Pakistan, Srilanka and Bangladesh will gain strength. Thanks

Date: 18.12.2008

বুধবার, ১৬ জুন, ২০১০

COMMUNIST UNION, BANGLADESH

FOUNDED: 2002

THEORETICAL BASIS OF 
COMMUNIST UNION IS
MARXISM-LENINISM


CO-ORDINATOR:  
AYUB REZA CHOUDHURY



CORRESPONDENCE COMMITTEE:
IMAM RAHI
FARUK MIHIR
 
S H MOSADDEK
RASHEDUL HASAN