রবিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১১

স্বাধীনতা উত্তর বাঙলাদেশে মেহনতী জনগণের শ্রেণীসংবিধান সমাজতান্ত্রিক সংবিধান

 ১। সংবিধান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূলনীতি। তবে সংবিধান প্রধানতঃ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল কাঠামো। সংবিধান দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনের জাতীয় নীতিমালা। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে সংবিধান অবধারিতভাবে শ্রেণীসংবিধান। সংবিধান মূলতঃ শ্রেণীসমূহের শ্রেণীসংগ্রামের কর্মসূচী। রাষ্ট্র, সরকার ও সংসদের আইনী ভিত্তি সংবিধান।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের শিক্ষা স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শ্রমিক কৃষক জনগণের সংবিধান বিপ্লবী গণতান্ত্রিক সংবিধান। পরাধীন দেশে (উপনিবেশিক দেশ) শ্রমিক কৃষক নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগণের সংবিধান জাতীয় গণ্তান্ত্রিক সংবিধান। স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্রে শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের (শিল্প শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক ও সকল শ্রমজীবি জনগণ) সংবিধান সমাজতান্ত্রিক সংবিধান।

দুঃখজনক হলেও সত্য বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে দীর্ঘদিন যাবত তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যা বিদ্যমান। বাঙলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মূল্যায়ন এখনও চূড়ান নয়। বিশেষতঃ বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর বা শ্রেণীচরিত্র নির্ধারণ এখনও প্রধানতঃ বিতর্কমূলক। অপর কথায় বাঙলাদেশের শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের সংবিধান গণতান্ত্রিক নাকি সমাজতান্ত্রিক এই গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগত প্রশ্নটি এখনও প্রধানতঃ অমীমাংসিত।

তবে তত্ত্বগত অনুশীলনের প্রেক্ষাপটে আমাদের সুচিন্তিত অভিমত বাঙলাদেশ (১৯৭১-২০১০) রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র। বাঙলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী এবং সরকার বুর্জোয়া সরকার। বাঙলাদেশের সমাজের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত।

তত্ত্বগত বিচারে স্বাধীনতা উত্তর বাঙলাদেশে সমাজের বিপ্লবের স্তর বা শ্রেণীচরিত্র সমাজতান্ত্রিক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বুর্জোয়া সংবিধানের গুণগত বিপরীতে শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের শ্রেণীসংবিধান সমাজতান্ত্রিক সংবিধান। স্বাধীনতা উত্তর ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা এবং রাজতন্ত্র অবসান উত্তর নেপালের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।

স্বাধীনতা উত্তর বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংবিধান প্রণীত হয় মূলতঃ পূর্ববাঙলার বাঙালী বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রামের কর্মসূচীর ভিত্তিতে। বিশেষতঃ ২১ দফা, ৬ দফা ও ১১ দফার (মূলতঃ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক কর্মসূচী) ভিত্তিতে বাঙলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়।


এখানে উল্লেখ করা যায় পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) পূর্ববাঙলায় কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী প্রভাবশালী কর্মসূচী ভিত্তিক সংগ্রাম বিশেষতঃ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংগ্রাম গড়ে উঠেনি। বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০১০) কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী প্রভাবশালী কর্মসূচী ভিত্তিক সংগ্রাম বিশেষ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংগ্রাম সংগঠিত হয়নি। এমনকি বৃটিশ আমলের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য।

আমাদের মতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মূল তত্ত্বের মধ্যে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিদ্যমান তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যাগুলির সমাধানের নির্দেশনা নিহিত। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান তত্ত্বগত ভিত্তি নির্ধারক তত্ত্বগত ভিত্তি। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিশ্বজনীন কমিউনিস্ট মতবাদ কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ। মার্কস, এঙ্গেলস ও লেনিন বিশ্বজনীন কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক, নেতা ও সংগঠক।

এবার তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যাগুলির সমাধান বিষয়ক পর্যালোচনা উপস্থিত করা যাক। প্রকৃতপক্ষে বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার তত্ত্বগত সমস্যা ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুণগত বিকাশের তত্ত্বগত সমস্যা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

একাত্তর সালে বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে। সাতচল্লিশ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে। বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত। অপরদিকে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন (বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র) মূলতঃ বুর্জোয়া একনায়কত্ব। আটচল্লিশ সালের শ্রীলংকা ও সামপ্রতিক কালের নেপালের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।

বাঙলাদেশের (পূর্ববাঙলা) জনগণের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ মূলতঃ প্রগতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ পূর্ববাঙলার জনগণের উপর পাকিস্তান বুর্জোয়া রাষ্ট্রের জাতিগত নিপীড়ন। পূর্ববাঙলার জনগণই বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত নায়ক। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে পূর্ববাঙলার জনগণ পরিচালিত হয় বুর্জোয়া রাজনৈতিক ধারার (আওয়ামী লীগ) ও কমিউনিস্ট রাজনৈতিক ধারার (কমিউনিস্ট পার্টি সংগঠনগুলি) নেতৃত্বে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ ভারত ও রাশিয়ার ষড়যন্ত্রের ফল নয়। বস্তুর বিকাশের ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীন কারণ প্রধান।

ভারতের জনগণের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা সংগ্রাম মূলতঃ প্রগতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত। ভারতের জনগণই ভারতের মুক্তিসংগ্র্বাম ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নায়ক। বৃটিশ বিরোধী এই ঐতিহাসিক সংগ্রামে ভারতের জনগণ পরিচালিত হয় বুর্জোয়া রাজনৈতিক ধারার (কংগ্রেস) এবং কমিউনিস্ট রাজনৈতিক ধারার (কমিউনিস্ট পার্টি) নেতৃত্বে। জাতীয় কংগ্রেস প্রধানতঃ হিন্দু ধর্মীয় সমপ্রদায় থেকে আগত বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক দল।

ভারত ও পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র। পাকিস্তান বুর্জোয়া রাষ্ট্রটি ইসলামের নামে প্রকাশ্য সাম্প্রদায়িক চরিত্র বিশিষ্ট। ভারতের বুর্জোয়া রাষ্ট্রটি ধর্মনিরপেক্ষতার নামে প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িক চরিত্র বিশিষ্ট।

পাকিস্তানের সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ বৃটিশ ভারতে মুসলিম জনগণের উপর ধর্মীয় নিপীড়ন, কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চাদপদ তত্ত্বগত অবস্থান ও মুসলিম লীগ (মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে আগত বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক দল) কর্তৃক হিন্দু-মুসিলম সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবহার। হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও পাকিস্তানের সৃষ্টি বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্রের ফল নয়। বস্তুর বিকাশের ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীন কারণ প্রধান।

আমাদের মতে সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শোষণ মূলতঃ রাজনৈতিক। পরাধীন দেশে উপনিবেশিক দেশে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র সরাসরি উপস্থিত থাকে ও লগ্নি পুঁজি বিনিয়োগ করে। সাম্রাজ্যবাদের পরোক্ষ শোষণ মূলতঃ অর্থনৈতিক। স্বাধীন দেশে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র দেশীয় রাষ্ট্রের (বুর্জোয়া রাষ্ট্র অথবা সামন রাষ্ট্র) সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ও লগ্নি পুঁজি বিনিয়োগ করে। উল্লেখ্য, শ্রেণীবিভক্ত সমাজে রাজনৈতিক শোষণ প্রধান শোষণ এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম প্রধান সংগ্রাম।

অবজেকটিভ কারণেই উপনিবেশিক দেশে বা পরাধীন দেশেও পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে। ভারত তার প্রমান। স্বাধীন দেশে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে বেশী মাত্রায়। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা তার প্রমান। স্বাধীন দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার পুঁজিবাদও স্বাধীন।

দক্ষিণ এশিয়ার আর্থ-সামাজিক বিকাশের ধারায় বাঙলাদেশের (পূর্ববাঙলা) উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। বাঙলাদেশে বিকশিত পুঁজিবাদের মূলগত ভিত্তি ও ধারাবাহিক অতীত বৃটিশ আমলে ও পাকিস্তান আমলে বিকশিত পুঁজিবাদ। বাঙলাদেশে পুঁজি ও মজুরী শ্রম, পুঁজিপতিশ্রেণী ও শ্রমিকশ্রেণী প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে উপস্থিত। দীর্ঘদিন আগে থেকেই বাঙলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় মানুষের শ্রমশক্তি পণ্য এবং জমিও পণ্য। বাঙলাদেশে দুটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার উপস্থিত। বাঙলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রিয়াশীল ও শক্তিশালী। বাঙলাদেশের বুর্জোয়ারা পেশাজীবি বুর্জোয়ারা একাধিক সংগঠনে সংগঠিত। স্বাধীন দেশ বাঙলাদেশের পুঁজিবাদও স্বাধীন।


১৯৫০ সালে বাঙলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু জমিদার প্রথার উচ্ছেদ হয়েছে। বাঙলাদেশের সমাজে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত, বিশেষ করে কৃষিতে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত। কার্যকরভাবে বাঙলাদেশে বিচার বিভাগ, জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র, প্রাথমিক শিক্ষা, উচচ শিক্ষা ও নারী শিক্ষা উপস্থিত। বাঙলাদেশে সার্বজনীন ভোটাধিকার, সংবিধান ও সংসদের উপস্থিতি রয়েছে। মাঝে মাঝে সামরিক শাসন আধা-সামরিক শাসন জারী হওয়ার পরও। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত। বাঙলাদেশের শাসকশ্রেণী বুর্জোয়াশ্রেণী শ্রেণীস্বার্থে বিশেষভাবে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ।

ঐতিহাসিক কারণে বাঙলাদেশে মূলতঃ সমাজতান্ত্রিক অথনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রামের কর্মসূচীর ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রণীত হবে।

সঙ্গত কারণে বাঙলাদেশে অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য বিদ্যমান বুর্জোয়া সংবিধানের গুণগত বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের মূলনীতি বা রূপরেখা উপস্থিত করা। সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের রূপ রেখার ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তোলা। স্বাধীনতালাভের পর পরই বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংবিধানের প্রত্যক্ষ বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা উপস্থিত করার দায়িত্ব ইতিহাস অগ্রসর কমিউনিস্টদের উপর দায়িত্ব অর্পন করে।

আমাদের মতে বাঙলাদেশের বুর্জোয়া সংবিধানের মূলনীতিঃ গণতন্ত্রের নামে বুর্জোয়া গণতন্ত্র , যা কিনা মূলতঃ বুর্জোয়া স্বৈরতন বুর্জোয়া একনায়কত্ব। জাতীয়তাবাদের নামে নিপীড়ক বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে প্রকাশ্যে ধর্মের সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবহার। সমাজতন্ত্রের নামে বা সামাজিক ন্যায় বিচারের নামে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা (ব্যক্তিগত মালিকানা ভিত্তিক)।

বাঙলাদেশে বুর্জোয়া সংবিধানের মূলনীতির গুণগত বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের মূলনীতিঃ প্রলেতারীয় গণতন্ত্র প্রলেতারীয় একনায়কত্ব। মূলগতভাবে ব্যক্তিমালিকানার উচ্ছেদ। বৃহৎ ভূমি। শিক্ষা ও আবাসন জাতীয়করণ। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বাজেয়াপ্ত। শিল্প ও কৃষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রবর্তন। কৃষিতে যৌথ মালিকানা ও যৌথ উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন। সঙ্গতিপূর্ণ বন্টন ব্যবন্থা প্রবর্তন। সামাজিক উৎপাদন বাবস্থা, সামাজিক বন্টন ব্যবস্থা ও সামাজিক মালিকানার ভিত্তি সৃষ্টি।

রাষ্ট্র থেকে ধর্মের বিযুক্তিকরণ ও ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা উচ্ছেদ এবং সকল ধর্মের নর নারীর ঐক্য ও সম্মিলন। সমাজের সকল স্তরে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা। নিপীড়িত জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার (স্বাধীনতার অধিকার বা বিচ্ছেদের অধিকারসহ) প্রতিষ্ঠা এবং সকল নিপীড়িত জাতির মেহনতী নর নারীর ঐক্য ও সম্মিলন। ব্যাপক বিদু্তায়ন, ব্যাপক শিল্পায়ন এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ। শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যকার পার্থক্য, গ্রাম ও শহরের মধ্যকার পার্থক্য বিলোপ। মানসিক শ্রম ও কায়িক শ্রমের মধ্যকার বৈষম্য হ্রাস। সমাজ জীবনে মেহনতী নর নারীর যৌথ জীবন ভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সৃষ্টি।


লেনিনের মৃতু্যর পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ও সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শোষণের অবসানের পর পৃথিবীর দেশে দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শোষণের মধ্যকার পার্থক্য, দেশীয় পুঁজিবাদের অনিবার্য বিকাশ, পুঁজিবাদী সমাজে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত ও সমাজের বিপ্লবের স্তর নির্ধারক বিষয়ক তত্ত্বগত সমস্যা। লেনিনের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক ও নেতা হিসাবে পরিচিত কারও পক্ষে উপরোক্ত তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যার যথাযথ সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়নি।

জার স্বৈরতন্ত্রের আমলে রাশিয়ায় বৃটিশ ও ফরাসী সাম্রাজ্যবাদীর রাষ্ট্র কতৃক অনেক বেশী পরিমাণ লগ্নি পুঁজি বিনিয়োগকৃত ছিল। রাশিয়ায় ভারী শিল্প কারখানার উপর ইঙ্গ-ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রন ছিল। কিন্তু লেনিন ও বলাশেভিক পার্টি ইঙ্গ-ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের পরোক্ষ শোষণকে রাশিয়ার জনগণের উপর প্রধান শোষণ হিসাবে নির্ধারণ করেননি। লেনিন তৎকালীন রাশিয়ায় প্রধানতঃ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সংগঠিত করার চেষ্টা করেননি। বরং লেনিন রাশিয়ার জার স্বৈরতন্ত্রের শোষণকেই রাশিয়ার জনগণের উপর প্রধান শোষণ হিসাবে চিহ্নিত করেন। লেনিন ও বলাশেভিক পার্ঢি রাশিয়ায় প্রধানতঃ বিপ্লবী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সংগঠিত করেন।

লেনিনের মৃত্যুর পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ও সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শোষণের অবসানের পর আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনেও তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন প্রধানতঃ দুই কেন্দ্রে (মস্কো ও পিকিং) বিভক্ত হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট বিতর্কের নামে দেশে দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনে নানারকম তত্ত্বগত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক এই দুই কেন্দ্রই সাম্রাজ্যবাদের পরোক্ষ শোষণকে সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শোষণ হিসাবে চিহ্নিত করে। দুই কেন্দ্রই তৃতীয় বিশ্বের স্বৈরাচারী সরকারগুলিকে (বুর্জোয়া ও সা্মন্ততান্ত্রিক ) নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জোট গঠন করে। তবে এক পর্যায়ে মস্কো বুর্জোয়া ইন্দিরা সরকারকে (ভারতের মেহনতী জনগণের প্রধান শত্রু) নিয়ে এবং পিকিং বুর্জোয়া আইউব সরকারকে (পাকিস্তানের জনগণের বিশেষতঃ পূর্ববাঙলার জনগণের প্রধান শত্রু) নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জোট গঠন করে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিপর্যয় সৃষ্টির পেছনে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিরোধী মস্কো ও পিকিং এর উপরোক্ত ভূমিকা একটি মূল কারণ। কমিউনিস্ট আন্দোলনে এই ক্ষতিকর ধারাটি এখনও খানিকটা বর্তমান।

১৯১৭ সালে রাশিয়ায় ফেব্রুয়ারী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর লেনিন এ কথাটি লিখেন, "রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এই পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে যে রাশিয়া একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র "। লেনিনের এই তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্ব সাতচল্লিশ সালের ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এবং একাত্তরের বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ও সাম্প্রতিক কালের নেপাল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
লেনিনের মৃত্যুর পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যেক্ষ শোষণের অবসানের পর পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশ স্বাধীন পুঁজিবাদী দেশ বুর্জোয়া রাষ্ট্র। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশের মেহনতী জনগণের উপর পুঁজিবাদী শোষণ প্রধান এবং বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের শোষণ নির্যাতন প্রধান। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশ সাধারণভাবে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র । পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশের সমাজে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রধানতঃ পরিসমাপ্ত। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশে পুঁজিবাদী দেশে মেহনতী জনগণের প্রধান সংগ্রাম পুঁজিবাদ উচ্ছেদ ও সমাজতন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পৃথিরবীর বেশীরভাগ রাষ্ট্রে বুর্জোয়া রাষ্ট্রে মেহনতী জনগণের প্রধান সংগ্রাম বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বুর্জোয়া সরকারের ক্ষমতা উচ্ছেদ ও সমাজতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এসব কথা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাঙলাদেশ ও নেপালের জন্য প্রযোজ্য।

বুর্জোয়া সংবিধানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার। বাঙলাদেশের বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানতঃ শাসকশ্রেণীর বুর্জোয়াশ্রেণীর শ্রেণীস্বার্থ রক্ষক। তবে একইসঙ্গে তা সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষক। সমাজতান্ত্রিক সংবিধানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানতঃ শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের শ্রেণীস্বার্থ রক্ষক।

এখানে উল্লেখ করা যায় দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন সময় ভুলত্রুটি সীমাবদ্ধতাসহ কয়েকজন কমিউনিস্ট, বামপন্থী তাত্ত্বিক নেতা নিজ নিজ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ তত্ত্বগত সমস্যাগুলির সমাধানের চেষ্টা করেন। ১৯৪৭-৪৮ সালে বিটি রনদীভ ভারতের সমাজের বিপ্লবের স্তরকে সমাজতান্ত্রিক চিহ্নিত করেন। পঞ্চাশ দশকে পূর্ববাঙলায় অনিল মুখার্জী ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রামের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন। ষাট দশকে আবদুল মতিন ও আলাউদ্দিন আহমেদ এবং দেবেন সিকদার ও আবুল বাশার পাকিস্তানের জাতীয় অর্থনীতিকে পুঁজিবাদী চিহ্নিত করেন। পঞ্চাশ দশকে ষাট দশকে ডাঃ সাইফউদ্দাহার শ্রমিকশ্রেণীর চরিত্র, জীবন যাপন ও আচরণের দিকটির উপর বিশেষতঃ ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রামের দিকটির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন। ষাট দশকে সিরাজ সিকদার, দেবেন সিকদার, আবুল বাশার ও আব্দুল মালেক মাইতি পূর্ববাঙলার জনগণের প্রধান শত্রু হিসাবে পাকিস্তান বুর্জোয়া রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করেন এবং প্রধানতঃ পাকিস্তান বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলেন। একাত্তর সালে শ্রীলংকায় বিজয় রোহানা বীর দেশে জনগণের প্রধান শত্রু হিসাবে প্রধানতঃ দেশীয় বুর্জোয়া স্বৈরতন বিরোধী সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

১৯৭২ সালে বাঙলাদেশে ডঃ আখলাকুর রহমান ও সিরাজুল আলম খান বাঙলাদেশের সমাজের বিপ্লবের স্তর সমাজতান্ত্রিক নির্ধারণ করেন এবং এক পর্যায়ে প্রধানতঃ দেশীয় বুর্জোয়া স্বৈরতন বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। আশি দশকে দাউদ হোসেন বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের বিকাশের দিকটি বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন। আশি দশকে সিপিবি কৃষি শ্রমিকের (ক্ষেত মজুর) সংগঠন ও সংগ্রামের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন। বদরুদ্দীন উমর ও আনু মুহাম্মদ কমিউনিস্ট আন্দোলনে তত্ত্বগত চর্চার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন ও এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।


নব্বই দশকে বাঙলাদেশে ফরহাদ মাজহার গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমজীবি আন্দোলকারী সংস্থাগুলির বিপ্লবী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দিকটি বিশেষভাবে তুলে ধরেন। নব্বই দশকে নেপালে প্রচন্ড ও বাবুরাম রাজতন্ত্র কে দেশের জনগণের প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং এক পর্যায়ে প্রধানতঃ রাজতন্ত্র বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলেন।

আমাদের মতে বাঙলাদেশে কমিউনিস্টদের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কেবল এই সুসঙ্গত পথে। প্রথমতঃ বাঙলাদেশে শ্রমিক গরীব কৃষক মেহনতী জনগণের শ্রেণীপ্রাধান্য ভিত্তিক বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করা। মেহনতী নর নারীর আন্দোলনকারী সংস্থাগুলি কর্তৃক মেহনতী নর নারীর শ্রেণীপ্রাধান্য ভিত্তিক অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়তঃ অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের অধীনে সমাজতান্ত্রিক সংবিধান পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

কেবল একটি সঠিক ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বাঙলাদেশে শ্রমিক গরীব কৃষক মেহনতী জনগণের শ্রেণীপ্রাধান্য ভিত্তিক বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করা সম্ভব। শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক ও গরীব কৃষকের পক্ষে বাঙলাদেশে বুর্জোয়া স্বৈরতন কে (বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার) উচ্ছেদ করা সম্ভব এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

এই কারণে বাঙলাদেশে অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য শহরাঞ্চলে শিল্প কারখানায় বিশেষতঃ গর্মেন্টস শিল্প কারখানায় বিপ্লবী ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা। গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন ও গরীব কৃষক সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলা। উল্লেখ্য, ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিক শ্রেণীর প্রকৃত শ্রেণীসংগঠন। ট্রেড ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান শ্রেণীসংগঠন।

অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য একইসঙ্গে মেহনতী জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম সংগঠিত করা। তবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগ্রামকে রাজনৈতিক সংগ্রামের অধীনস্থ করা। মেহনতী জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করার লক্ষ্যে সঠিক কর্মসূচীর ভিত্তিতে সাধারণতঃ বুর্জোয়া নির্বাচন ও বুর্জোয়া পার্লামেন্টকে অবশ্যই ব্যবহার করা।

অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য একইসঙ্গে দেশীয় পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী মেহনতী জনগণের সংগ্রাম গড়ে তোলা। তবে সঙ্গত কারণে সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রামকে দেশীয় পুঁজিবাদ বিরোধী মেহনতী জনগণের সংগ্রামের অধীনস্থ করা। এক কথায় বাঙলাদেশে একইসঙ্গে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রাম (জাতীয় মুক্তিসংগ্রামসহ) ও সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম গড়ে তোলা। তবে বাস্তব কারণেই বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে চলমান সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের অধীনস্থ করা।

বাঙলাদেশের অগ্রসর কমিউনিস্টদের কর্তব্য সমাজতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে সঠিক তত্ত্বগত লাইন ও কর্মসূচীর ভিত্তিতে অগ্রসর কমিউনিস্ট সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে এবং সঠিক ও ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গঠন প্রক্রিয়াকে ক্রমশঃ শক্তিশালী করা।


তারিখঃ ১১.১২.২০১০

গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবী মেনে নাও, গার্মেন্টস শ্রমিকনেতা মোশরেফা মিশুকে মুক্তি দাও।

# চট্টগ্রামের গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচার কর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। 
# সকল শিল্প কারখানায় গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দাও।
# গার্মেন্টস শ্রমিকনেতা মোশরেফা মিশুকে মুক্তি দাও। আটক সকল গার্মেন্টস শ্রমিকনেতা ও কর্মীদের মুক্তি দাও।
# সারাদেশে রাষ্ট্রীয় ও সরকারী সকল প্রকার শোষণ নির্যাতন বন্ধ কর।
# সারাদেশে বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ কর। সকল নাগরিককে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার দাও। নারী নির্যাতন বন্ধ কর। 

# সকল শ্রমিকের গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক বেতন পনের হাজার টাকা (আপাততঃ দশ হাজার টাকা) নির্ধারণ কর।
# গ্রামাঞ্চলে স্থায়ীভাবে ক্ষেতমজুরের কাজের বন্দোবস্ত কর। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাও।
# গ্রামাঞ্চলে গরীব কৃষকের ন্যায়সঙ্গত দাবী মেনে নাও। রূপগঞ্জের গরীব কৃষকের ন্যায়সঙ্গত দাবী মেনে নাও।
# ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ কর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। দুর্নীতিপরায়ন রাজনৈতিক নেতা, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলা ও পেশাজীবিদের বিচার কর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। 

# জাতীয় সম্পদ তেল গ্যাস কয়লা সম্পদ রক্ষা কর। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বাজেয়াপ্ত কর। 


কমিউনিস্ট ইউনিয়ন
তারিখঃ ১৬/১২/২০১০