শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০১০

ধর্মীয় মৌলবাদ উচ্ছেদের পথ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম

বাঙলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ সক্রিয়। ধর্মীয় মৌলবাদের তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধর্মের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবহার। ধর্মীয় মৌলবাদ এক অর্থে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় মতবাদ। ধর্মীয়  সামপ্রদায়িকতা তার সাধারণ ভিত্তি। আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে অন্যের ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করে নিজের ধর্মের লোকদের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করাই সামপ্রদায়িকতা।

বাঙলাদেশের সমাজ পুঁজিবাদী। যেখানে পুঁজিবাদী শোষণ থাকে মজুরী দাসত্ব থাকে সেখানে
ধর্মীয় মৌলবাদ কমবেশী ক্রিয়াশীল থাকে। ধর্মীয় মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্রের সৃষ্টি নয়। দারিদ্র, অনাহার, চিকিৎসা বঞ্চনা, অশিক্ষা ও কুসংস্কার থেকে ধর্মীয় মৌলবাদের সৃষ্টি হয়। দেশে অগ্রসর কমিউনিস্ট আন্দোলনের অনুপস্থিতিতে ধর্মীয় মৌলবাদ বৃদ্ধি পায়।

বাঙলাদেশে
ধর্মীয় মৌলবাদ উচেছদের পথ ভূমি ও শিল্পে ব্যক্তিমালিকানার উচ্ছেদ এবং ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা বাণিজ্য জাতীয়করণ বিশেষতঃ খাদ্য ব্যবসা জাতীয়করণ। দেশে কৃষিতে ব্যাপক যৌথ উৎপাদন প্রবর্তন। দেশের সকল নর নারীর চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রদান এবং অফিসের বেতন সমান সমান করা।
ধর্মীয় মৌলবাদের দার্শনিক ভিত্তি পশ্চাদপদ ভাববাদ। এদের দার্শনিক মতবাদের মূল দিকটি প্রকৃতি, সমাজ ও মানবচিন্তার বিকাশের নিয়মকে অস্বীকার করা। দর্শনের বিকাশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সত্য ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ও দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকে অস্বীকার করা। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শ্রেণীসংগ্রামকে অস্বীকার করা।
ধর্মীয় মৌলবাদে রয়েছে তিনটি প্রতিক্রিয়াশীল অর্থনৈতিক, সামাজিক নীতি। মেহনতী জনগণের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থকে বিরোধীতা করা, সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারকে বিরোধীতা করা এবং জাতিসমূহের জাতিসত্ত্বা বা জাতীয়তাকে বিরোধীতা করা।

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি ব্যক্তিগত মালিকানা।
ধর্মীয় মৌলবাদ ব্যক্তিগত মালিকানায় বিশ্বাসী। ধর্মীয় মৌলবাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। ধর্মীয় মৌলবাদ পুঁজিবাদ, তবে তা পশ্চাদপদ পুঁজিবাদ বা পশ্চাদপদ বুর্জোয়া-পেটিবুর্জোয়া। এই প্রতিক্রিয়াশীল মতবাদ ইহকালের তুলনায় পরকালের জীবনের উপর বেশী আস্থাবান।
ধর্মীয় মৌলবাদ পুঁজিবাদের অবিচ্ছিন্ন সহযাত্রী। ধর্মীয় মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদের উচেছদ ছাড়া ধর্মীয় মৌলবাদের উচ্ছেদ সম্ভব নয়। বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচেছদ ছাড়া ধর্মীয় মৌলবাদ উচেছদ সম্ভব নয়। এক কথায় বাঙলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ উচেছদের মূল পথ পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদের সংগ্রাম।

তারিখঃ ৩০.০৬.২০১০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন