মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১১

কোন পথে বাঙলাদেশে নারী নির্যাতনের অবসান ঘটতে পারে

বাঙলাদেশে ধনী দরিদ্র সকল নারীই সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নির্যাতিত। বিশেষ করে দরিদ্র নারী শ্রমজীবী নারী অধিকতর নির্যাতিত। এরা হলেন রুমানা, হেনা এবং আরও লক্ষ লক্ষ অসহায় নারী। সময়ের দাবী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সমাজের অগ্রসর, আন্তরিক ও সাহসী নারী পুরুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। 


বাঙলাদেশ একটি পুঁজিবাদী দেশ। বাঙলাদেশের সমাজ পুঁজিবাদী সমাজ! বাঙলাদেশের সমাজে পুরুষরা বেশীরভাগ ধনসমপত্তির মালিক। যেখানে পুঁজিবাদী শোষণ থাকে ও মজুরী দাসত্ব থাকে, যেখানে ধনসম্পদে ও ক্ষমতায়নে পুরুষের প্রাধান্য থাকে সেখানে নারী নির্যাতন অনিবার্য। শুধু তাই নয় গণিকাবৃত্তিও অনিবার্য। 



বাঙলাদেশের সমাজে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সীমিত। অপরদিকে বাঙলাদেশের সমাজে পুরুষরা বিশেষ রকম অধিকারপ্রাপ্ত। যেখানে পুঁজিবাদ, পুঁজিপতি, বণিক, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ থাকে সেখানে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমতা প্রতিষ্ঠা হতে পারেনা। এমনকি আইনের ক্ষেত্রেও তা হতে পারেনা। নামে মাত্র আইনের সমতার মানে জীবনের ক্ষেত্রে সমতা নয়। বাস্তব খুব কঠিন।



বাঙলাদেশের সমাজে নারী নির্যাতনের অবসান বা নারী মুক্তির মূল পথ বৃহৎ ভূমি, শিল্প কারখানা ও আবাসনে ব্যক্তি মালিকানার উচ্ছেদ এবং এগুলির রাষ্ট্রীয়করণ। ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা বাণিজ্য ও খাদ্য ব্যবসা জাতীয়করণ। সমাজে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয়করণ। সারাদেশে কৃষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠা এবং যৌথ উৎপাদন প্রবর্তন।



বাঙলাদেশের সমাজে নারী নির্যাতনের অবসান বা নারী মুক্তির মূল পথ সকল নারী ও পুরুষকে চাকুরী প্রদান এবং অফিসার ও শ্রমিকের বেতন ক্রমশঃ সমান সমান করা। শিল্প ও কৃষিতে ব্যাপক নারী ও পুরুষকে যৌথ উৎপাদনে টেনে আনা। সারাদেশে সামাজিক ভোজনালয়, কিন্ডারগার্টেন ও শিশুলালনাগার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারীকে তার সাধারণ সাংসারিক বৃত্ত থেকে বাহিরে টেনে আনা।



পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অর্থনৈতিক ভিত্তি শোষণমূলক ব্যক্তিগত মালিকানা। পুরুষতন্ত্র পুঁজিবাদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পুরুষতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে সমাজে ধনসম্পদে ও ক্ষমতায়নে পুরুষের প্রাধান্য, দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে।



সঙ্গত কারণে বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রাম ছাড়া বাঙলাদেশে নারী নির্যাতনের অবসান ঘটতে পারেনা। বাঙলাদেশে পুঁজিবাদ, পুরুষতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ উচ্ছেদ ছাড়া নারী নির্যাতনের অবসান বা নারী মুক্তি সম্ভব নয়।



এক কথায় বাঙলাদেশে নারী নির্যাতনের অবসান ও নারী মুক্তির মূল পথ পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তোলা। বাঙলাদেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকার উচ্ছেদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করা। সমাজতন্ত্রই নারী মুক্তির মূল পথ।





১১.০৬.২০১১                                    আইউব রেজা চৌধুরী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন