বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১১

সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামঃ একুশের চেতনা বাস্তবায়নের পথ

পাকিস্তা রাষ্ট্রের (১৯৪৭) ভেতর বায়ান্ন সালে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাঙলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মূলতঃ প্রগতিশীল ন্যায়সঙ্গত। শ্রেণীচরিত্রের দিক থেকে বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম মূলতঃ বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক।

একুশে ফেব্রুয়ারীর বাঙলা ভাষা সংগ্রাম সংঘটিত হয় মূলতঃ পূর্ববাঙলার বাঙালী বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বে। ফেব্রুয়ারীর বাঙলা ভাষা সংগ্রামে সাধারণভাবে সংগঠিত পূর্ববাঙলার কমিউনিস্টদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

সাধারণভাবে একুশের চেতনা বলতে বোঝায় বাঙলা ভাষাসহ পাকিস্তানের, পূর্ববাঙলার সকল ভাষার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা। বাঙালী জাতিসহ পাকিস্তানের, পূর্ববাঙলার নিপীড়িত জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠা। সমাজ জীবনে সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার যথাযথ প্রচলন। দেশে ধর্মনিরপেক্ষ অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক শিক্ষা, সমাজ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।

তত্ত্বগত বিচারে শ্রেণীচরিত্রের কারণে বুর্জোয়াদের পক্ষে সকল ভাষার সকল জাতির সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বুর্জোয়ারা প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শিক্ষা, সমাজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা। বিশেষতঃ নিপীড়িত জাতির বুর্জোয়ারা ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও সমাজজীবনে সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার যথাযথ প্রচলন করতে পারেনা। এসকল বুর্জোয়ারা শ্রেণীস্বার্থে নিজেদের দেশে বিদেশী ভাষাকে অধিকতর গুরম্নত্ব প্রদান করে।

পাকিস্তানের শাসন আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) এবং স্বাধীনতা উত্তর বাঙলাদেশে (১৯৭১-২০১১) সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম সংগঠিত না হওয়ার কারণে একুশের চেতনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনও দূর্বল। সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের মূল কথা বৃহৎ ভূমি, শিল্প কারখানা, ব্যাংক বীমা, বাবসা বাণিজ্য আবাসন জাতীয়করণ এবং কৃষিতে যৌথ উৎপাদন প্রবর্তন।

যেহেতু বাঙলাদেশ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্র; বাঙলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থা পুঁজিবাদী। সেহেতু কেবল শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের পথে বাঙলাদেশের সকল ভাষার সকল জাতির সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কেবল উপরোক্ত পথে বাঙলাদেশে সকল জাতির মেহনতী নরনারীর সম্মিলন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, বাঙলাদেশে মাতৃভাষা বিদেশী ভাষার মধ্যে মাতৃভাষাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা এবং সমাজজীবনে সকল ক্ষেত্রে মাতৃভাষার যথাযথ প্রচলন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা সম্ভব।

এক কথায় বাঙলাদেশে একুশের চেতনা বাস্তবায়নের পথ প্রধানতঃ পুঁজিবাদী শোষণ উচেছদ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। দেশে বুর্জোয়া রাষ্ট্র সরকার উচেছদ এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং একইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ধর্মী মৌলবাদ উচেছদের সংগ্রাম।


তারিখঃ ২১.০২.২০১১

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন